ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল এর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

31

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের পর ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার হওয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ দুদক কর্মকর্তা মোঃ সালাউদ্দিন এ মামলা করেন। মামলা নং ১৫। সোমবার দন্ডবিধির ১৬১, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) এবং মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। এরপর দুদক আসামিকে আদালতে নিয়ে যায়। পরে বেলা তিনটা ২০ মিনিটে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ সালাহউদ্দিন এ কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা পাচারের উদ্দেশে আসামি নিজ ঘরে রাখে। ওই টাকা নিয়ে সে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল। এছাড়া সে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত বিনষ্টসহ সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। সে এই মুহূর্তে জামিন পেলে গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করতে পারে এবং তদন্তেরও বেঘাত ঘটবে।
বিকেল ৫টা ৫মিনিটে আদালত শুনানি গ্রহণ করে। আসামি পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়। ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। মামলার শুনানি করেন ঢাকা বারের বর্তমান সভাপতি গাজী শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রচি, সাবেক সভাপতি মাসুদ আহমদ তালুকদার, খোরশেদ আলম এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান হাওলাদার ও এডভোকেট ফারুক আহমেদ।
শুনানিতে তারা দাবি করেন, টাকাগুলো অবৈধ উপায়ে অর্জন করা নয়। তিনি আয়কর রিটার্নে তার হাতে ক্যাশ ৩০ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। বাকি টাকা তার মা এবং শাশুড়ি দিয়েছেন ফø্যাট কেনার জন্য। গত বছর আসামি ১ লাখ ৯ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছেন। তিনি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসাও করেন। আর কেউ ওনাকে ঘুষ দিয়েছেন এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি জামিন পেলে পলাতক হবেন না।
অন্যদিকে দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল এবং মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধিতা করে শুনানিতে বলেন, আয়কর ফাইল অনুযায়ী এক বছরে তার বেতন থেকে আয় ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এবং ১৫ লাখ টাকা তিনি ব্যবসা থেকে আয় করেছেন। একজন সরকারী কর্মচারী কী ব্যবসা করেন যে বছরে ৬/৭ লাখ টাকা বেতন পেয়ে সংসার চালিয়ে কত টাকা সাশ্রয় করতে পারেন যে ৮০ লাখ টাকা তার বাসায় পাওয়া যেতে পারে। টাকাগুলো অবৈধ উপায়ে অর্জন করা। আসামিকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে। তাই আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক।
আইনজীবীদের শুনানির সময় বিচারক কাঠগড়ায় থাকা আসামি পার্থ গোপাল বণিককে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনার ব্যাসিক কত? উত্তরে তিনি জানান ৩০ হাজার টাকা। বাসায় যে টাকা পাওয়া গেছে সে টাকা কোথা থেকে তুলেছেন বিচারকের এমন প্রশ্নের উত্তরে এ কর্মকর্তা বলেন, পোস্ট অফিসে এফডিআর করা ৩০ লাখ টাকা ছিল তা তুলেছি। টাকাগুলো তার বেতন-ভাতার টাকা। আয়কর নথিতে টাকাগুলো দেখানো আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আইনজীবী ভুল করে টাকাগুলো দেখায়নি।
আসামির বক্তব্য এবং উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে পার্থ গোপাল বণিকের বাসা থেকে উদ্ধার করা ৮০ লাখ টাকার দুদক কোন বৈধ উৎস পায়নি বলেছেন দুদকের সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত। সোমবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। অন্যদিকে, পার্থর বাসায় অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া দুদকের পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেছেন, পার্থ বণিকের ঘোষিত আয়কর ফাইলে এ টাকার ঘোষণা নেই। তাই আমাদের মনে হয়েছে, এই টাকা অবৈধ আয় থেকে অর্জিত।