ন্যাপের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ॥ মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপের অবদান ও ধর্মকর্মসহ সামজতন্ত্রের প্রণেতা অধ্যাপক মাজাফফর

22

জেড.এম শামসুল

বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে এদেশের সৎ ও দক্ষ প্রগতিশীল জনমানুষের প্রত্যাশা শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে বৃটিশ তাড়ানোসহ তথাকথিত পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংগ্রামের লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালের ২৭ জুলাই বাংলাদেশের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এদেশের গরীব মেহনতি মানুষের রাজনীতি কায়েম করার প্রয়াস চালিয়ে আসছে। পাকিস্তান আমলে ন্যাপের নেতাকর্মীরা হুলিয়া নির্যাতনে শিকার কম হয়নি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর রোষানল থেকে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। তৎকালীন সময় প্রতি মুহূর্তে ন্যাপ কর্মীদের ওপর নেমে আসতো জেল জুলুম ও চরম নির্যাতন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ন্যাপের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়সহ গেরিলা বাহিনী গঠন করে মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। দেশকে হানাদারমুক্ত করতে ন্যাপের অঙ্গ সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও সাথী সংগঠন সিপিবি যৌথ গেরিলা বাহিনী গঠন করে। এ বাহিনী দেশকে হানাদারমুক্ত করতে মাঠে ময়দানে ছড়িয়ে পড়ে, এদের নিহত আহতের সংখ্যা কম নয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর ভূমিকা কম ছিলনা। এরা এপ্রিল থেকেই করিমগঞ্জ-কাছাড়, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয় প্রভৃতি অঞ্চলে সীমান্ত এলাকাজুড়ে অসংখ্য রিক্রটিং ক্যাম্প গড়ে তুলেছিলেন ভারতে সরকারের সহায়তায়। ন্যাপ সভাপতি পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে বিশ্বব্যাপী আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে জনমত গঠন করেন এবং তার সর্বাপেক্ষা বড় কৃতিত্ব সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের সমর্থন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে আনা। এটা না হলে মার্কিন সপ্তম নৌবহর তো বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি পৌঁছে বাংলাদেশে অক্রমণ করেই যে ভয়াবহ ধ্বংসলীলা চালাতো, তাতে যে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হতে আজ তা কল্পনা করা দুরূহ। অপরদিকে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেট মানি সিংহ ছিলেন মুজিবনগরের সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা। কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ ও পঙ্কজ ভট্টচার্য ছিলেন এই গেরিলা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার। ন্যাপের অবদানের কথা যথার্থভাবে মূল্যয়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগিতাকারী ন্যাপ নেতাকর্মীদেরকে সহায়তায় সরকার এগিয়ে আসবেন। ন্যাপ মানেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের অবদান লিখতেই হয়। তাই তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করলাম।
ধর্মকর্মসহ সামজতন্ত্রের প্রণেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ একমাত্র প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা ঃ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সভাপতি এবং উপমহাদেশের বাম রাজনীতির পুরোধা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার এলাহাবাদ গ্রামে তার নিজ বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। প্রবীণ এই রাজনীতিক রাজধানীর বারিধারায় একমাত্র কন্যা এবং স্ত্রী আমিনা আহমেদ এমপিকে নিয়ে বাস করছেন। তার পিতা আলহাজ কেয়াম উদ্দিন ভূঁইয়া ছিলেন স্কুল শিক্ষক, মাতার নাম আছারুন্নেছা। তার স্ত্রী আমিনা আহমদ এমপি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের হাতে গড়া রাজনৈতিক দলের হাল ধরেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ভিশন ছিল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কিন্তু আজঅবদি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ন্যাপের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষীকি উপলক্ষে সিলেট জেলাসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হচ্ছে। সিলেট জেলা ন্যাপের উদ্যোগে আজ সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ন্যাপ সমর্থক ও নেতা কর্মীদের উপস্থিত থাকার জন্য জেলা নেতৃবৃন্দ অনুরোধ জানিয়েছেন।
লেখক : মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, লেখক ও সাংবাদিক।