বন্যায় কমলগঞ্জে কৃষি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি

18

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
ধলাই নদীর ভাঙ্গনে চলমান বন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কৃষি ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ভেসে গেছে খামারের লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ। উজানের পাহাড়ি ঢল ও নদী ভাঙ্গনে সৃষ্ট বন্যায় এখনও নি¤œাঞ্চলের শমসেরনগর, পতনউষার, মুন্সীবাজার ও রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে এখনও বন্যা স্থিতিশীল রয়েছে। এসব এলাকার কৃষকরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন। কৃষকরা নদী খনন ও সংস্কারের দাবি তোলেছেন। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ ও মৎস্য অধিদপ্তর ক্ষয়ক্ষতির এচিত্র মেনে নিতে পারছেন না।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় সাড়ে তিনশ’ হেক্টরের আউশ ক্ষেত, ৩০ হেক্টরের সবজি ক্ষেত ও প্রায় ৩০ হেক্টরের আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছোটবড় ১৪৮টি খামার ও পুকুর নিমজ্জিত হয় এবং খামারীদের প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গ্রামীন রাস্তাঘাট, কালভার্ট ভেঙ্গে পড়ে পড়ায় শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত শুক্রবার রাতে ধলাই নদীর রামপাশা এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয়। রবিবার রহিমপুরের পুরাতন ভাঙ্গন এলাকা ছাড়াও সকাল থেকে আদমপুরের ঘোড়ামারা এলাকায় ও বিকালে হকতিয়ারখলায় ভাঙ্গন দিয়ে গ্রামে পানি প্রবেশ করে। দু’দফা ধলাই নদীর বন্যায় পাঁচদিন ধরে পানি নিস্কাশন না হওয়ায় নি¤œাঞ্চলের জনসাধারণ এখনও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সর্বশেস আজ বুধবার এসব এলাকায় সরকারি চাল বিতরণ শুরু হয়। শমসেরনগর-কুলাউড়া সড়কের রেলগেট এলাকায়ও শমসেরনগর-মৌলভীবাজার সড়কের শিমুল তলায় রাস্তার কিছু স্থানে তিন ফুট পরিমাণ পানি থাকায় যান চলাচল ও পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জ পৌরসভার কিছু এলাকা ব্যতীত এ পর্যন্ত ৩ দশমিক ২শ’ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ও ২টি কালভার্ট ব্রিজ মিলিয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাটের প্রায় সোয়া কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কৃষকরা বলেন, বন্যায় প্রতি বছর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। আবার বিভিন্ন সহায়তা আসলেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা বঞ্চিত হন। তারা ধলাই, লাঘাটা নদী খনন ও সংস্কারের দাবি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বন্যায় আউশ ক্ষেত ও বীজতলার কিছু ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তবে এখনও পুরোপুরি তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি।’ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আসাদ উল্ল্যা বলেন, ‘১৪৮টি পুকুর ও খামারের ভেসে যাওয়া মাছের ক্ষয়ক্ষতি হিসাবে ১৮ লক্ষ টাকা নিরূপণ করা হয়েছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬২ মে.টন চালের মধ্যে ৫২ মে.টন চাল ৭টি ইউনিয়ন ও কমলগঞ্জ পৌরসভার মধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ করা হবে। আরও ১০ মে.টন চাল পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।’