ক্রিকেটের উন্নয়নে জোরদার পদক্ষেপ চাই

11

নিউজিল্যান্ডকে আবারও হতাশায় ডুবিয়ে নিজেদের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপের ফাইনালে ইতিহাস গড়ল স্বাগতিক ইংল্যান্ড। নাটকীয়তা বা উত্তেজনা, সব দিক থেকেই এবারের ম্যাচ ছাড়িয়ে গেছে সেই ম্যাচকে। মঞ্চ এবার ক্রিকেট তীর্থ লর্ডস। বিশ্বকাপের ফাইনালে সেখানেই নাটকীয় সব ঘটনা ঘটতে থাকল একের পর এক। ৩০ হাজার দর্শকে ঠাসা গ্যালারি। ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। সেই অনিশ্চয়তা ছিল ম্যাচের প্রতিটি পরতে, প্রতিটি বলে। ক্রিকেট রোমাঞ্চের কত যে রং হতে পারে তা দেখিয়েছে ফাইনাল। গ্যালারির দর্শকদের পাশাপাশি টেলিভিশনে বিশ্বের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী দর্শক উপভোগ করেছে ক্রিকেট-উত্তেজনার রূপ। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ বলটি পর্যন্ত পেন্ডুলামের মতো দুলেছে দুই দলের ভাগ্য। অনিশ্চয়তার যে রহস্যময় সৌন্দর্য থাকে, লর্ডসে তা-ই মেলে ধরেছিল ক্রিকেট। দুই দলের ক্রিকেটারদের দক্ষতা, শারীরিক যোগ্যতা ও মানসিক শক্তির চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে গেল ফাইনালের ম্যাচটিতে। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে গ্যালারি। এমনকি বাংলাদেশেও প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পাড়ায়-মহল্লায় সমর্থকদের কখনো আনন্দে ভাসিয়েছে। সব মিলিয়ে অন্য সব ম্যাচকে, এমনকি বিশ্বকাপের অন্য সব ফাইনাল ম্যাচকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ। প্রথম ৫০ ওভারের শ্বাসরুদ্ধকর খেলা টাই হয়ে গড়াল সুপার ওভারে। সেখানেও তীব্র রোমাঞ্চ। আবার টাই! শেষ পর্যন্ত শিরোপা নির্ধারিত হলো বাউন্ডারিতে, যেখানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড; ক্রিকেট সাম্রাজ্যের নতুন রাজা।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছে, যদিও প্রশংসায় তৃপ্ত হওয়ার দিন বাংলাদেশের ক্রিকেট বেশ আগেই পেরিয়ে এসেছে। দিন শেষে ফলাফলটাই বড় ব্যাপার। আসলে বড় টুর্নামেন্টে চাপের মুহূর্তগুলো জিততে শিখতে হয়। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় নার্ভ ধরে রাখতে হয়। এই দক্ষতা বোধ হয় অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। খেলোয়াড়রা ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের জায়গায় অনেক উন্নতি করেছেন; কিন্তু জয়ের মানসিকতা না থাকলে নিয়মিত জেতা সম্ভব নয়। এবারের বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সাকিব ও মুশফিক ছাড়া আর কেউ সেভাবে ধারাবাহিক ছিলেন না। সাকিব ব্যাট হাতে ৬০৬ রান এবং বল হাতে নিয়েছেন ১১ উইকেট। ২০১৯ বিশ্বকাপে সেরা রান সংগ্রাহকের তালিকায় সাকিব আল হাসান আছেন ৩ নম্বরে। আট ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়ে সেরা উইকেট শিকারির তালিকায় মুস্তাফিজুর রহমান আছেন ৪ নম্বরে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের খেলোয়াড়দের দেশের বাইরে নানা কন্ডিশনে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি দেশের জেলায় জেলায় মাঠ ও উইকেটের উন্নয়ন করতে হবে। যেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উপযোগী মাঠ আছে, সেখানে পিচগুলোতে ভিন্নতা আনতে হবে। বিশ্বে ক্রিকেট আমাদের নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেছে। এখন ক্রিকেট পরিচর্যায় আমাদের সযতœ হতে হবে।