বিএনপি খালেদা জিয়া ছাড়া জাতীয় কাউন্সিল করবে না

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবেন, আদৌ পাবেন কি না এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দলের নেতাকর্মীরা। তাই অধিকাংশ নেতাকর্মী যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সিলের মাধ্যমে দল পুনর্গঠনের পক্ষে। তবে দলের আরেকটি অংশ চায় যখন খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন তখনই দলের জাতীয় কাউন্সিল করতে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে খালেদা জিয়াকে ছাড়া জাতীয় কাউন্সিল করবে না বলে বিএনপি হাইকমান্ড দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়ে দিয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সর্বস্তরে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়লে দলের একাংশের নেতাকর্মীরা জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দল পুনর্গঠনের দাবি করে। এ দাবিটি যখন জোরালো হতে থাকে তখন এ বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন লন্ডনপ্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবন্দী থাকায় এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে বিদেশে থাকায় আপাতত কাউন্সিল করা যাচ্ছে না বলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়ে জাতীয় সংসদে যোগ দেয়ার পর দলের সিনিয়র নেতারা প্রকাশ্যে এ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা শুরু করার পর আবারও কৌশলে জাতীয় কাউন্সিলের বিষয়টি সামনে এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়। তারেক রহমানের নির্দেশেই দলের কিছু সিনিয়র নেতা এমন কৌশল নেন বলে জানা যায়।
এদিকে একদিকে জাতীয় কাউন্সিল না করা এবং অপর দিকে তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তে দলীয় কর্মকা- পরিচালিত হতে থাকায় ভেতরে ভেতরে অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে। এমনই এক চাপা ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটেছে অতি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দেয়া বক্তব্যে। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তার এ বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির ভেতরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে বলে জানা গেছে। এর আগে দলের অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ আরও ক’জন নেতা এমন বক্তব্য দিয়ে বিএনপি হাইকমান্ডের তোপের মুখে পড়েছেন বলেও জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করায় কার নেতৃত্বে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হবে এ নিয়ে হাইকমান্ড চরম অস্বস্তিতে। আর এ কারণেই জাতীয় কাউন্সিলের বিষয়ে সায় দিচ্ছে না। তবে কোন কোন সিনিয়র নেতাকে দিয়ে মাঝেমধ্যে জাতীয় কাউন্সিলের বিষয়ে কথা বলিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীদের সান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে। আর তারেক রহমান যে জাতীয় কাউন্সিলের পক্ষে নেই এ বিষয়টি বুঝতে পেরে একাংশের নেতারা দলের ভবিষ্যত নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিলের পর ৫৯২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করে বিএনপি। গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাদকতায় ৩ বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করে নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করতে হয়। সে হিসেবে এ বছর ১৯ মার্চের মধ্যেই জাতীয় কাউন্সিল করে কমিটি পুনর্গঠনের বাধ্যবাদকতা থাকলেও হাইকমান্ডের অনুমতি না পাওয়ায় তা করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই দল চলছে।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বেশ কিছু ফরেন ডেলিগেটরের উপস্থিতিতে জাঁকজমকভাবে জাতীয় কাউন্সিল করেও এর সুফল পায়নি বিএনপি। জাতীয় কাউন্সিলের পর নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং-কোন্দল বেড়ে যায়। এ নিয়ে দলের হাইকমান্ডও বিব্রত হয়। এক পর্যায়ে যারা কমিটিতে স্থান পেতে আগ্রহী তাদের সবাইকে গণহারে স্থান দিয়ে ৫৯২ সদস্যের ঢাউস জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এর ফলে জেলা-উপজেলা কমিটিতে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয় এমন নেতারাও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীই চান যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় কাউন্সিল করে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করতে। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও এমনটিই চান। বিশেষ করে সংস্কারপন্থী বলে পরিচিত যেসব নেতারা এখনও কমিটিতে ফিরে আসতে পারেননি, তারা চান নতুন কাউন্সিলের পর কমিটি পুনর্গঠন করা হোক। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন কাউন্সিলের বিষয়ে নারাজ। কারণ, তারেক রহমান চান না তার ও তার মায়ের অনুপস্থিতিতে অন্য কোন সিনিয়র নেতার নেতৃত্বে দলের জাতীয় কাউন্সিল হোক। এতে তার নিজের দলীয় প্রভাব খর্ব হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর বার বার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন স্তরের কমিটি গঠন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন, জাতীয় কাউন্সিলের অনুমতি না দেয়া ও একক সিদ্ধান্তে এমপিদের শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ায় স্বল্প সংখ্যক নেতা ছাড়া দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের প্রতি নাখোশ।