মানববন্ধন ও নাগরিক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা ॥ গাছ কেটে নজিরবিহীন অপরাধ করেছে সিলেট বেতার

55

সিলেট বেতারকেন্দ্রকে বৃক্ষশূন্য করে অনিয়মের মাধ্যমে ১৪৩টি গাছ কাটার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সিলেটের পরিবেশবাদীরা। গতকাল ৩ জুলাই বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটায় নগরীর মীরের ময়দানস্থ বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রের সামনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার উদ্যোগে নানান শ্রেণীপেশার বৃক্ষপ্রেমিকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয় ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সহ-সভাপতি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববুদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্টার জামিল আহমেদ চৌধুরী’র সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালীন সমাবেশে মূল বক্ত্যবে সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, যেখানে একটি গাছ রক্ষার জন্য অতীতে আমরা আন্দোলন করেছি, সেখানে নগরের কেন্দ্রে বেতারের মত সরকারী প্রতিষ্ঠান বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে দেড়শত গাছ কেটে ফেলবে আর কেউ প্রতিবাদ করবে না ?
তিনি আফসোসের সাথে বলেন, গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে এই সংবাদ জানতে পারলে পরিবেশকর্মীরা অবশ্যই তা প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসতো।
সভাপতির বক্তব্যে বাপা সিলেট শাখার সহ-সভাপতি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্টার জামিল আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ি কোন প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রি কিংবা কাটতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। সরকারের বৃক্ষ রক্ষার এই বিধিবিধান সর্বসাধারণের জন্য যেভাবে প্রযোজ্য, বেতার কর্মকর্তাদের জন্যও একই ভাবে প্রযোজ্য। রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম হিসাবে বেতার থেকে নিয়মিত বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের জন্য প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। সেই বেতার বাংলাদেশের সিলেট কেন্দ্রে যখন বিধিবহির্ভুত ভাবে বৃক্ষনিধণ করা হয় তখন সচেতন নাগরিক হিসাবে ঘরে বসে থাকার অবকাশ থাকে না।
সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাম্যবাদী দলের কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরোর সদস্য কমরেড ধীরেণ সিংহ বলেন, নজীরবিহীন অপরাধ করেছে সিলেট বেতার। যা কোনভাবেই মেনে নেয়ার মত নয়।
সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজের মুখপাত্র ডাঃ মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার বলেন, সিলেট নগরীর ঐতিহ্য হচ্ছে এখানকার সবুজ নির্মল পরিবেশ। কিন্তু এই সবুজকে নানা অজুহাতে হরণ করা হচ্ছে।
ভূমিসন্তান বাংলাদেশে’র সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর তাঁর বক্তব্যে গাছ কেটে নতুন স্থাপনা তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, যেখানে কয়েকটি কক্ষ নিয়ে বেসরকারী টিভি স্টেশন ২৪ ঘণ্টা অনুষ্ঠান করে সেখানে বিশাল ভবন থাকা সত্বেও বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রের নতুন ভবন দরকার ! তাও আবার ১৪৩টি গাছ কেটে !
সেইভ দ্যা হেরিটেজ এন্ড এনভায়রমেন্ট-এর সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদি বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠানের এমন গাফিলতির কঠোর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তিনি সরকারী বিধি অবজ্ঞা করে ১৪৩টি গাছ কাটার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে বলেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশবিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীণ এক্সপ্লোর সোসাইটির সভাপতি মো. হাসনাইন আহম্মেদ, বাপা সিলেট শাখার যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ, লেখক-গবেষক ডাঃ এনামুল হক, শিশু সংগঠক বিমান তালুকদার, সাংস্কৃতিক সংগঠন নগরনাট প্রতিনিধি অরুপ বাউল, ভোরের কাগজ পাঠক ফোরামের সিলেট জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মিহির মোহন, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত চৌধুরী লিটন, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক সুপ্রজিত তালুকদার, কবি আল মামুন বাবলু প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি