শ্রীমঙ্গলে দুই আ’লীগ নেতার পক্ষের লোকদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা, পরিস্থিতি থমথমে

15

শ্রীমঙ্গল থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের রাজপাড়া এলাকায় নির্মিতব্য রশনী পলি ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাইপ লাইন অপসারণকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আছকির মিয়া ও ভূনবীর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মো. চেরাগ আলীর অনুসারীদের মধ্যে গত দুইদিনে দফায় দফায় পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশকয়েকজন আহত হন।
আছকির মিয়ার অনুসারী গুরুতর আহত আলীসারকুল গ্রামের সাবেক মেম্বার লেচু মিয়া (৬৫) ও তার ছেলে নৌশাদ মিয়া(৪৫) কে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্যদেরকে শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত এক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় রবিবার বিকেল তিনটায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইউএনও’র কার্যালয়ে জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব, ইউএনও নজরুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র এএসপি আশরাফুজ্জামান, ওসি মো.আব্দুছ ছালেক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আছকির মিয়া, পৌর আওয়ামীলীগের সম্পাদক অর্ধেন্দু কুমার দেব, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলী।
সভায় এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। সকলে এতে একমত পোষন করেন।
জানা যায়, রশনী পলি ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে স্থানীয় সমস্যা মিটমাট করে দিতেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. চেরাগ আলী। মালামাল সাপ্লাই দিতেন তার লোকজন। পরে ওই ইন্ডাস্ট্রিজের উন্নয়নমূলক সকলকাজ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আছকির মিয়া তার অনুসারীদের নিয়োজিত করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন চেয়ারম্যান চেরাগ আলীসহ তার অনুসারী আহাদ মেম্বার ও তার সহযোগীরা।
সম্প্রতি ওই ইন্ডাস্ট্রিজের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি পাইপ লাইন প্রতিষ্ঠানের বাইরে ভুনবীর-শমসেরগঞ্জ সড়কের উপর দিয়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ায় এনে সংযুক্ত করলে পরিবেশের ক্ষতি হবে এমন অভিযোগ তুলে এ কাজে বাধা দেন চেরাগ আলী ও তার সমর্থকরা।
এ নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগসহ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার সন্ধ্যায় সরকারবাজারে ইউপি চেয়ারম্যান চেরাগ আলী মাইকিংয়ের মাধ্যমে ঘোষনা করান বর্জ্যনিষ্কাশনের পানির পাইপ উচ্ছেদের জন্য সকল গ্রামবাসীকে পরদিন রবিবার সকাল ৭ টায় বাজারে জমায়েত হওয়ার জন্য। এই মাইকিংয়ের ১৫/২০ মিনিটের মাথায় আছকির মিয়ার সমর্থকরা চেরাগ আলীর অনুসারী মো. কদর মিয়ার উপরে অতর্কিত হামলা করে আহত করে।
এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে কিছুক্ষণের মাথায় চেরাগ আলীর সমর্থকরা আছকির মিয়ার সমর্থক সাবেক ইউপি সদস্য মো. লেছু মিয়া ও তার ছেলে নৌসাদ মিয়া, ভাই রমজান মিয়াসহ আরো কয়েকজনের উপরে পাল্টা আক্রমণ করে রক্তাক্ত জখম করে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় লেছু মিয়া ও নওশাদ মিয়াকে সিলেটের ওসমানি মেডিকেলে স্থানান্তরিত করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে রবিবার ভোর সাড়ে ছয়টায় আছকির মিয়ার ভাতিজা রাজপাড়া পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা ফয়সল মিয়া তার মুরগীর ফার্মে গেলে চেরাগ আলী সমর্থক ইউপি সদস্য আহাদ মিয়া, ওয়াছির মিয়া ও ফজলু মিয়া তার উপরে অতর্কিত আক্রমন করে আহত করে। এর পরপরই ওই ইউনিয়নের পূর্ব রাজপাড়া ও দক্ষিণ রাজপাড়া গ্রামের দুই গ্রুপের লোকজন ইটপাটকেল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এতে শ্রীমঙ্গল-ভুনবীর-শমসেরগঞ্জ সড়কে দুইঘন্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে। চরমদুর্ভোগে পড়েন মানুষজন।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে দশটায় আছকির মিয়ার ভাতিজাকে মারধরের খবর পেয়ে আলিশারকুল গ্রামের গুরুতর আহত লেচু মিয়ার অনুসারীরা গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে দলে দলে লোকজন লাঠি-সোটা ও দা-বটি নিয়ে সরকার বাজারের দিকে এগিয়ে যায়। এসময় এক পক্ষ অন্য পক্ষের দিকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া দেয়।এ খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছু লাঠি সোটা উদ্ধার করে এবং উভয় পক্ষের উত্তেজনা থামিয়ে গ্রামবাসীর শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের পাশাপাশি মৌলভীবাজার জেলা থেকে এস আই এর্শাদুলের নেত্বেত্বে অতিরিক্ত ১ প্লাটুন রিজার্ভ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকায় সাধারণ জনগণের মনে আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা যায়। দফায় দফায় হামলার ঘটনায় এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে কয়েক গ্রামের মানুষ গ্রাম থেকে শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে গোপেন্দ্রগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়িরা জানমালের নিরাপত্তাহীনতার কারণে দোকান পাট বন্ধ রাখেন। এতে পার্শ্ববর্তী ২/৩ গ্রামে মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার সদাইয়ে মারাত্মকভাবে ভোগান্তির শিকার হন। এমনকি ভয়ে ও আতঙ্কে আশপাশের গ্রামের মানুষজন ঘর থেকে বের হতে সাহস করে নি।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক জানান, ‘ঘটনার পর থেকেই শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ সদা তৎপর রয়েছে। রবিবার সন্ধ্যারদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো.আছকির মিয়া ও বর্তমান ভুনবীর ইউপি চেয়ারম্যান মো. চেরাগ আলীকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য আহবান জানিয়েছি।’তিনি আরও বলেন, এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।