শেষ পর্যন্ত পুলিশই পাশে দাঁড়ালো নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর!

120

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
অপরাধীকে বাঁচাতে দুইদিন সালিশ নাটকের পর অবশেষে পুলিশকেই পাশে দাঁড়াতে হলো নির্যাতিতা অসহায় স্কুলছাত্রীর! ১৭ বছর বয়সী ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাকারী চি‎িহ্নত সন্ত্রাসী আব্দুল বারিকের (৪০) বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলাও করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে থানা পুলিশের এসআই দেবাশীষ শর্ম্মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন, (মামলা নং ২০)। গ্রেফতারের পর বুধবার বিকেলে বারিককে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতেও পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ থানায় চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, প্রতারণার ৫টি মামলা রয়েছে। বারিক উপজেলার দীপবন্দ (বিলপার) গ্রামের মৃত মমশ্বর আলীর ছেলে।
তবে, বিষয়ে থানা পুলিশ, আশুগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ, নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর পরিবার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাতব্বরা একে অপরকে দোষারুপ করেছেন। তাছাড়া তারা সকলেই ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্যও করেছেন।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম এ বিষয়ে সতত্যা জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করায় সালিশকারীরা মেয়েটিকেও লুকিয়ে রাখে। পরে মেয়েটিকে খোঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পান। জিজ্ঞিাসাবাদে মেয়েটি তার বাবা বেঁচে নেই, কোন ভাইও নেই, জানালে মানবিক কারণে তিনি সিলেটের নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন’র সঙ্গে কথা বলে ওই ছাত্রীর পাশে দাঁড়ান। তাছাড়া ঘটনার একদিন পর আশুগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন জিডি করতে থানায় গিয়েছিলেন বলেও জানান।
স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরীর এক ছাত্রী ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। আর টিসি আনতে গত সোমবার উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে যায়। বিদ্যালয় থেকে টিসি নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় পাশের গ্রাম বাবুনগরে গেলে সন্ত্রাসী বারিক তাকে টেনে হেঁচড়ে ঝোপের পাশে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় তার চিৎকারে বাবুনগর ও পাঁচঘরী গ্রামের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে পাঁচঘরীর সবজি চাষী আব্দুর রুপের বাড়িতে নিয়ে যান এবং অধ্যক্ষকে খবর দেন। ওইদিন অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন, ছাত্রীর চাচা শফিক মিয়া ও পাঁচঘরির সিরাজ মিয়াসহ স্থানীয় মাতব্বররা পুলিশে খবর না দিয়ে রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত বারিকের ভাই আয়না মিয়ার সঙ্গে হাত মিলান। তারা বিষয়টি সালিশে নিষ্পত্তির নামে অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। মঙ্গলবার দুপুরে আশুগঞ্জ বাজারে স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিনের পতিা দোহাল গ্রামের হাজী ইর্শাদ আলীর সভাপতিতে সালিশ বৈঠকও করেন। কিন্তু এর আগেই পুলিশ অপরাধী বারিককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান।
পুলিশে খবর না দিয়ে সালিশ কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রীর চাচা শফিক মিয়া এ প্রতেবদককে বলেন, ঘটনার পরপরই তিনি বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেনর নিকট গিয়েছেন। কিন্তু অধ্যক্ষ তাকে পুলিশে খবর দিতে বলেন নি। তাছাড়া তার মতের বাইরে অধ্যক্ষ ও আতিকুর রহমান মাষ্টার মিলে বিষয়টি সালিশে মিমাংসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে পাঁচঘরী মাতব্বর সিরাজ মিয়া ও হলিচাইল্ড স্কুলের পরিচালক আতিকুর রহমান আতিক এ প্রতিবেদককে বলেছেন, অপরাধীকে বাঁচাতে নয়, শফিক মিয়া ও মেয়েটির পরিবারকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতেই তারা সালিশ করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেছেন, আয়োজকরা প্রশাসনের প্রতিনিধি রাখার কথা বলে তার পিতা হাজী ইর্শাদ আলীকে সভাপতি দিয়ে নিস্ফল বৈঠক করেছেন।
ঘটনার একদিন পর থানায় গিয়ে জিডি করতে চাইলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নিজেকে মামলার সাক্ষী দাবি করে অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, মেয়েটি তার প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত না থাকায় তিনি মামলার বাদী হন নি। তাছাড়া তাকে না জানিয়ে মেয়েটির চাচা ও স্থানীয় মাতব্বররা মিলে সালিশ বৈঠক করেছেন।