অবশেষে ডিআইজি মিজান সাময়িক বরখাস্ত

21

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অবশেষে পুলিশের বিতর্কিত ও আলোচিত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে এমনটা গত ১৯ জুন জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি সেদিন জানিয়েছিলেন এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করে বঙ্গভবনে পাঠানো হচ্ছে। তবে এক সপ্তাহেও এই প্রস্তাব কার্যকর না হওয়ায় সমালোচনা ছিল বিভিন্ন মহল থেকে।
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এক নারীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে বিয়ে করা, বিয়ে গোপন করতে প্রভাব খাটিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা, টেলিভিশন উপস্থাপিকা ও তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে ৬৪ টুকরো করা, ওই নারীর নামে ফেসবুকে অশালীন ছবি ছড়ানোর অভিযোগ নিয়ে বারবার সংবাদ হয়েছে। সব শেষ দুর্নীতির মামলার তদন্ত নিজের পক্ষে নিতে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার মতো কাজের কথা তিনি নিজে সদর্পে ঘোষণা দেন। ইতিমধ্যে দুদক কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছিরকে বরখাস্ত করা হলেও ডিআইজি মিজান স্বপদে বহাল থাকায় সমালোচনা হচ্ছিল।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে এক নারীকে জোর করে বিয়ে করার অভিযোগ উঠে ডিআইজির বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে ওই বছরের শেষ দিতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে নেয়া হয়। তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদরদপ্তর।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে সে প্রতিবেদন জমা পড়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সোয়া এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
মিজানুরের বিরুদ্ধে করা সংবাদ পাঠিকার অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে কমিটি প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগের সত্যতা পায়। কমিটির কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ডিআইজি জানান, ওই সংবাদ পাঠিকা পরিকল্পিতভাবে তার আবেগের সুযোগ নিয়ে উস্কানিমূলক কথা বলে তাকে উত্তেজিত করেছেন। ফলে তিনি নিজে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে কিছু ‘অপ্রত্যাশিত’ শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। তবে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান।
ওই সংবাদ পাঠিকার অভিযোগ, ‘চন্দ্র মল্লিকা’ ও ‘দেশী মাল’ নামে দুটি ফেসবুক আইডি খুলে সেখানে তার আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করা হয়। এর পেছনেও ডিআইজি মিজানের হাত থাকার অভিযোগ ছিল। সাইবার ক্রাইম ইউনিট এই অভিযোগের তদন্ত নিয়ে কিছু বলছে না।
এ ছাড়া গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মিজানকে।
অনুসন্ধানে মিজানুর রহমান ও তার প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বিপুল সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। সোমবার ডিআইজি মিজান এবং তার স্ত্রীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি। আলোচিত-সমালোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন এ ব্যাপারে বন্দরগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।