শ্রীমঙ্গল পৌর শহর ও শহরতলীতে ব্যাটারী চালিত রিক্সা চলছে অবাধে, নেই বৈধতা

315

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌর শহর তথা উপজেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কে চলছে শত শত অবৈধ টমটম ও ব্যাটারি চালিত রিক্সা। মাসিক বন্দোবস্তে চলা এসব যানবাহনের নেই কোনো বৈধতা। এসব যানের বেপরোয়া চালকের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ জনসাধারণ।
ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা। তাছাড়া, ব্যাটারি চালিত রিক্সার পেছনে খরচ হচ্ছে জরুরি বিদ্যুৎ। কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। কিন্তু মৌলভীবাজার জেলা সদরে ব্যাটারি চালিতো রিক্সার দৌরাত্ম্যে নেই বললে চলে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যাটারি চালিত রিক্সার ব্যাটারির চার্জ ফুরালেও পায়ে সাধারণ রিক্সার মতো চালানোর সুবিধা থাকলেও চালকরা তা করে না। বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিসি ব্যাটারির সাহায্যে এসব রিকশা চলে। প্রতিটি রিক্সায় থাকে কম-বেশি ৪৮ ভোল্টের ব্যাটারি ও এক হর্স পাওয়ারের ছোট একটি মটর।
ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালকরা জানান, রিক্সার মটরে প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা চার্জ দিতে হয়। একবার চার্জ দিয়ে ১৪-১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত রিকশা চালানো যায়। মাসে চার্জ ব্যয় হয় প্রায় দু‘হাজার টাকা। রিক্সার মালিককে দিতে হয় দৈনিক ২’শ টাকা।
শ্রীমঙ্গলে ব্যাটারি চালিত রিক্সার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। এক হিসেব মতে, শহরের ৭/৮ টি রুটে মোট ৯৫০টি ব্যাটারী চালিত রিক্সা রোডে চলাচলে প্রতিমাসে তোলা হয় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এসব টাকা কার পকেট যাচ্ছে !। বিগত দুই বছর যাবত প্রতি টমটমের রোডে চলাচল ভর্তি ফি সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০০ টাকা নেয়া হয়। সর্বনিম্ন হিসাবে মোট টাকা দাড়াঁয় ৪০ লাখ টাকা।
শ্রীমঙ্গল শহরের চলাচল কারী ৮০০ টমটম থেকে প্রতিদিন ৪০ হাজার এবং প্রতি মাসে ১২ লাখ টাকা নেয়া হচ্ছে। শহরের চলাচলকারী প্রতি টমটম মাসে ১৫০০ ও ব্যাটারী চালিত রিক্সা প্রতি ২০০ টাকা মাসোহারা দিচ্ছে।
চালকরা জানান, প্রতিমাসে প্রতি ব্যাটারি চালিত রিক্সাকে চলাচলের জন্য তিনশত টাকা দিতে হয়। প্রতি মাসে তিনশত টাকা কাকে দিতে হয়, জানতে চাইলে তা চালকরা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু ও প্রভাবশালী ব্যক্তি টোকেন বা অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাটারি চালিত রিক্সা সড়কে চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে। প্রতিটির রিক্সার পেছনে ‘অটোরিক্সা মালিক সমিতি শ্রীমঙ্গল থানা এসআরএমএস ০০০৬২’।
শ্রীমঙ্গল পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানিয়েছে, ‘ইতোমধ্যে ব্যাটারিচালিত রিক্সার চার্জ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। চার্জ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।’
সূত্র জানিয়েছে, ব্যাটারি চালিত রিক্সা টমটম ও রিক্সা গুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন কথিত যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী। আর নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান।
আর এসবের টাকা আদায় ও টমটম, রিক্সা চালক অর্ন্তভুক্তির সাথে যারা পরিচালনা করেন, ইউপি সদস্য মানিক মিয়া, আখতারুজ্জামান খেলু, তামিম, মঙ্গল মিয়া, সাদা মানিক, আজম মিয়া, জব্বারসহ মোট ৫২জন বিগত তিন বছর আগেও ১৫ লক্ষ টাকা ব্যাটারিচালিত চালকদের টাকা মেরে ফরিদ পুর বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পালিয়ে ছিল।
২০১৬ সালে শ্রীমঙ্গল থানার সাবেক ওসি মাহববুর রহমান পৌর শহরের সব ব্যাটারী চালিত রিক্সা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ওসি নজরুল ইসলাম থানায় যোগদানের পর থেকে আবার সেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে শ্রীমঙ্গল থানায় নতুন ওসি মো.আব্দুস ছালেক দুই মাস আগে যোগদানের পর স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও টমটম গাড়ী শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তিনি থানার সামনে সিএনজি স্ট্যান্ড সরানোর প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করেন। কিন্তু এখনও পুরোপুরি ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও টমটম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শ্রীমঙ্গল ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, আমরা বছরে ৩০/৪০ হাজার টেক্স দিয়ে থাকি,তারপরও একটু কাগজে কোন গাফলা থাকলে পুলিশ কেস দেয়। আর টমটম ও ব্যাটারী চালিতো রিক্সা সম্পূর্ণ অবৈধ, সেটা পুলিশ বন্ধ করছে না। টমটমের কারণে আমরার রুজি-রোজগার বন্ধ হওয়ার উপক্রম। একটা ৫ বস্তা আবার ৬ বস্তা মালামাল বহন করে। এই মালামাল বহন করার দায়িত্ব হল পিকআপ ভ্যানের। তাতে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। যদি টমটম ও ব্যাটারী চালিতো রিক্সা বন্ধ না করা হয় আমরা সড়ক অবরোধ করার কোন ঘটনা থাকবে না।’
শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘এই শ্রীমঙ্গলকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব ব্যবসায়ী সমাজ, সুশীল সমাজ ও পৌরসভা এবং সাংবাদিক, পেশাজীবী যারা আছেন সকলের। ইদানিং শহরে টমটম ও ব্যাটারী চালিতো রিক্সা দুইটি যান বৃদ্ধি পেয়েছে। যার স্পিড খুব বেশি, সহজে ব্রেক হয় না। সরকারের যেমন বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে, তেমনি জনগণের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। অনেক সময় ব্রেক না হওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় মেয়ে ও ছেলেরা গুরুতর আহত হচ্ছেন। শহরের প্রতিটি সড়কে টমটম ও ব্যাটারী চালিত বাড়ছে। এতে যানজটের সৃষ্টির প্রধান কারণ। বিশেষ করে টমটম ও ব্যাটারী চালিত চালক শ্রীমঙ্গল শহরের বাসিন্দা নয়। বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রেনে আসে আবার ট্রেনে চলে যায়।’
কামাল হোসেন তিনি আরও বলেন, এসব চালকদের সঠিক ঠিকানা না থাকায় এদিকে শ্রীমঙ্গলে শহরে চুরি-ডাকাতি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলে এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া উচিত। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে কে এবং কিভাবে শহরে চলাচল করছে।’
ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলাচলের ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলার ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর টিআই মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কাজল জানান, এ ব্যাপারে একটা নাগরিক কমিটি করেন। অবৈধ টমটম ও ব্যাটারি চালিত রিক্সা ধরে জব্দ করেন। ভ্রাম্যমান আদালত দিয়ে গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে নিলামের ব্যবস্থা করেন। পুলিশের কাছে থাকলে আড়ালে অনেকেই তদবির করেন। তাই প্রকাশ্য স্থানে আটক করে, তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমান আদালতে জব্দ করলে এসব বন্ধ হবে। তবে এসবের বিরুদ্ধে সব-সময় অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।’
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার প্রকৌশলী মো. জহির আহমদ বলেন, ‘সম্প্রতি ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও টমটমের শুর করেছি। অনেক গুলো রিক্সা আটক করেছি। আটক করতে গিয়ে অনেকের তদবির ও কিছু প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে পৌরসভার সামনে অবস্থান নেয়। এরপর থেকে অভিযান বন্ধ করে দেই।’
জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আব্দুস ছালেক মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি শ্রীমঙ্গল থানায় যোগদান স্থানীয় ব্যবসায়ী সমাজের মতবিনিময় সভায় ঘোষণা দিয়েছি যে পর্যটন নগরীতে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনা হবে। পৌর শহরের ভেতরসহ নতুনবাজার এলাকার ভেতরসহ টমটম ও ব্যাটারী চালিতো রিক্সা চলাচল করতে দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ নিচ্ছি।’