ছাতকে সরকারি চাকুরি হচ্ছে বহিরাগতদের, বাদ পড়ছেন স্থানীয়রা

170

ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
ছাতকে সরকারি চাকুরি গ্রহণের ক্ষেত্রে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ কোটা সুবিধার সুযোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিষয়টি সু-কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে অবলিলায় চলে আসছে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রেও কৌশলে উত্তরণ হয়ে যাচ্ছে তারা। ফলে স্থানীয়রা সরকারি চাকুরি গ্রহণ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষক ও রেলওয়ে বিভাগে নিয়োগের ক্ষেতে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে নিয়োগ নেয়ার প্রবণতা অতিমাত্রায় লক্ষ্য করা গেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ছে না, নাকি বিষয়টি আমলে না নিয়ে অনৈতিকভাবে ভুয়া ঠিকানাধারীদের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে-এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই অন্য জেলার বহু মানুষ সরকারি চাকুরি নিয়ে বহাল তরিয়তে রয়েছেন এখানে। একইভাবে বহু চাকুরি প্রত্যাশী ব্যক্তি সব ধাপ পাড়ি দিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সর্বশেষ ধাপে অপেক্ষমান। আবার চাকুরির প্রত্যাশায় আরো শত শত প্রার্থী একইভাবে ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি বিভিন্ন পদে দরখাস্ত দিয়ে প্রহর গুনছে।
জানা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগে খালাসী ও ওয়েম্যান পদসহ একাধিক পদে বেশ কিছু লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব প্রার্থীরা নিয়োগ নেয়ার সকল ধাপ উত্তরন করে সর্বশেষ ধাপ পুলিশ ভেরিফিকেশন পর্যায়ে রয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত এসব প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ভুয়া ঠিকানাধারী। সঠিকভাবে পুলিশ ভেরিফিকেশন হলে মূল তথ্য বেরিয়ে আসবে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিও রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ সুনামগঞ্জ আবার কেউ সিলেটের ঠিকানা ব্যবহার করে নিয়োগ নিয়েছেন। মূলত: এরা কেউই সিলেট বিভাগের বাসিন্দা নয়। এ ক্ষেত্রে তারা ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কৌশলে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাগরিক সনদ নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার কোটায় চাকুরি নিচ্ছেন। সম্প্রতি রেলওয়ে বিভাগে খালাসী পদে গেল ১১মে ছাতকে ভুয়া স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করেন রমজান আলীর পুত্র জাকির হোসেন, ফজলুল রহমানের পুত্র রুবেল আহমদ ও সুহেলা মিয়া, ইসমাইল আলীর পুত্র নুরুল ইসলাম, সুনীল কুমার দাসের পুত্র সঞ্জয় কুমার দাস, নজর আলীর পুত্র মোঃ বদরুল আলম। গেল ২জুন রেলওয়ে বিভাগে ওয়েম্যান পদে ধন মিয়ার পুত্র মামুন আহমদ, দুদু মিয়ার পুত্র মো. ওয়াসিম, মহব্বত আলীর পুত্র আরিফ আহমদ, সিরাজুল ইসলামের পুত্র আমির হোসেন, ইসমাইল আলীর পুত্র ময়নুল ইসলাম। অন্যদিকে গেল ৫ বছরে ছাতক রেল-স্টেশনের কর্মচারি শ্রমিকদল নেতা শওকত আলী, মহব্বত আলী ও মোহাম্মদ আলী তিন সহোদয়ের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজন বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগে ছাতকের ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ই-খালাসী পদে মোজাম্মেল আলী, টিসি পদে মোশারফ আলী, পিতা- শওকত আলী। খালাসী পদে মুনুসর আলী, পোর্টার পদে ফাতেমা বেগম, ওয়েম্যান পদে আবদুল খাইয়ুম, অস্থায়ী গেই টকিপার পদে সাদ্দাম, ফখরুল ও মান্না গেইট, পিতা মোহাম্মদ আলী, ওয়েম্যান পদে মহব্বত আলীর পুত্র আরিফ আহমদ, খালাসী পদে মহব্বত আলীর জামাতা ও আবদুল বারির পুত্র সেলিম আহমদ, শওকত আলীর ভায়রা কবির আহমদের পুত্র খালাসী পদে এমরান আহমদসহ ২০/৩০ জন লোকের রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগে চাকুরি হয়েছে। শওকত আলী, মহব্বত আলী ও মোহাম্মদ আলীর পরবিারের সকলের চাকুরি সুনামগঞ্জ জেলা কোটায় হলেও সিলেট জেলার স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করে মোহাম্মদ আলীর পুত্র মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম এর ওয়েম্যান পদে চাকুরি হয়েছে। এদিকে এখানে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যাপক হারে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বহিরাগতরা নিয়োগ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে নিজ উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে দরখাস্ত করার বিধান থাকলেও বহিরাগতরা কৌশল অবলম্বন করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুয়া ঠিকানার বাসিন্দা সেজে নাগরিকত্ব সনদ গ্রহণে করে নিয়োগ নিয়েছেন। ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে চাকুরিরত আছেন শারফিন নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মল পুরকায়স্থ, চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইতি পুরকায়স্থ, রাতগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মমতা কর্মকার, নানশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেলিম আহমদ, খুরমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হায়দার আলী, খিদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝর্র্ণা তালুকদার, বারগোপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিরঞ্জন দাস, গোবিন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুপম দাস।
সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত এসব শিক্ষক-শিক্ষিকা কেউ ছাতক উপজেলার বাসিন্দা নয়। নিয়োগের সময় তারা ছাতক উপজেলার কোটায় নিয়োগ নিয়েছেন। আবার অনেকেই ছাতকের কোটায় নিয়োগ নিয়ে নিজ এলাকায় বদলী হয়ে চলে গেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাস জানান, এমন অভিযোগ তিনি এর আগেও পেয়েছেন। তিনি বিষয়টি আবারো খতিয়ে দেখবেন। ছাতক রেলওয়ের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান জানান, চাকুরি প্রার্থীরা যে কোন ঠিকানা ব্যবহার করে আবেদন করতে পারে। নিয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় তার সঠিক ঠিকানা বেরিয়ে আসবে। এতে আমাদের করণীয় কিছু নেই।
ছাতক থানার ওসি মোস্তফা কামাল জানান, এখানে তিনি নতুন এসেছেন। চাকুরি সংক্রান্ত পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টি তিনি এখনো দেখেননি। তবে এখন এ বিষয়টি তিনি নিজেই তদারকি করবেন। সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ভুয়া ঠিকানা দিয়ে এখানে অন্য জেলার মানুষ চাকুরি করার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখ জনক। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় শিক্ষিত যুব সমাজ। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।