বাজেট বাস্তবায়ন হোক

22

জাতীয় সংসদের এবারের বাজেট অধিবেশনে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে বাজেটের একাংশ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রথম জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব পাঠ করলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পরদিন অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন একটি রেওয়াজে দাঁড়িয়ে গেছে। এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ থাকায় প্রথমবারের মতো কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করেছেন শেখ হাসিনা। এবারের সংবাদ সম্মেলনের লক্ষণীয় দিকগুলো হলো তিনি ইতিবাচক কিছু দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখেছেন।
আমাদের দেশে জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর বাজেটের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হয়ে থাকে। বাজেট প্রস্তাবের পর অর্থনীতিবিদরা যেমন চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন, তেমনি বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা নানামুখী প্রশ্ন করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দেশের বেকার যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়ে বলেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
গ্রামভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো অনেকটাই কৃষিনির্ভর। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কৃষি খাতে সরকারের ভর্তুকি-প্রণোদনা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি কৃষি ভর্তুকি, ঋণ ও কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রণোদনাও থাকবে। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচির আলোকে পল্লী এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নে দেশজুড়ে পাঁচ হাজার ৫০০ কিলোমিটার নতুন সড়ক এবং ৩০ হাজার ৫০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ খাতে আগামী অর্থবছরে ৬৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এবারের বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয় ব্যাংক খাত ও খেলাপি ঋণ। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়েও স্পষ্ট কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যাংকঋণে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে না আনলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ চলছে। ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ ধরে সেভাবে সরকার কাজ করছে বলে জানান সরকারপ্রধান। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব হয়েছে। পুঁজিবাজারের প্রণোদনায় বিনিয়োগকারীর স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন আমরা নিজেরাই করব। কারো কাছে হাত পেতে নয়। কারো মুখাপেক্ষী হব না। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় আশার কথা। বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারলে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যে ইতিবাচক কথাগুলো বলেছেন, তা সত্যি হবে।