টাইগাররা হারলেও একাই লড়েছেন সাকিব

32

স্পোর্টস ডেস্ক :
ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৮৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করে জেতাটা কঠিন। একে অসম্ভব বললেও ভুল হবে না। পাহাড় সমান রানের টার্গেটে বাংলাদেশ পৌঁছাতেও পারেনি। এমনকি ৫০ ওভার ব্যাটও করতে পারেনি টাইগাররা। বিশ্বকাপে শনিবার স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে ১০৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। তবে হতাশাজনক এই হারের মধ্যে বাংলাদেশের প্রাপ্তি হচ্ছে সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি।
টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় হার। আর তিন ম্যাচ খেলে ইংল্যান্ডের এটি দ্বিতীয় জয়। বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ আগামী ১১ জুন। এদিন ব্রিস্টলে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
এদিন কার্ডিফে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ইংল্যান্ডের দেয়া ২৮৭ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪৮.৫ ওভারে ২৮০ রান সংগ্রহ করে অলআউট হয় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সেঞ্চুরি করেন সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ১২১ রান করে আউট হন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন মুশফিকুর রহিম। ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে জফরা আর্চার ৩টি, লিয়াম প্লানকেট ১টি, মার্ক উড ২টি, আদিল রশীদ ১টি ও বেন স্টোকস ৩টি করে উইকেট শিকার করেন।
বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে শুরতেই ধাক্কা খায়। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে জফরা আর্চারের বলে বোল্ড হন সৌম্য সরকার। ৮ বলে ২ রান করেন তিনি। এরপর তামিম-সাকিব মিলে ৫৫ রানের জুটি গড়েন। সাকিব দারুণ ব্যাটিং করে গেলেও তামিম সংগ্রাম করছিলেন। তিনি বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দলীয় ৬৩ রানে মার্ক উডের বলে কাভারে মরগ্যানের হাতে ক্যাচ হন তামিম। ২৯ বল খেলে তিনি করেন ১৯ রান।
এরপর ১০৬ রানের জুটি গড়েন বাংলাদেশ দলের অন্যতম দুই ব্যাটিং স্তম্ভ সাকিব ও মুশফিক। দলীয় ১৬৯ রানে প্লানকেটের বলে রয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক। তিনি করেন ৪৪ রান। মুশফিক ফেরেন ২৯তম ওভারে। এর পরের ওভারেই রশীদের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিথুন। দুই বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানরা সুবিধা করতে না পারলেও এক প্রান্তে চোখ জুড়ানো ব্যাটিং করে যান সাকিব আল হাসান। তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। সম্প্রতি সময়ে দারুণ ফর্মে আছেন সাকিব। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচেই তিনি করেন হাফ সেঞ্চুরি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৫ রান করার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি করেন ৬৪ রান। আর শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ বলে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম শতরান পূর্ণ করেন সাকিব। ওয়ানডেতে এটি তার অষ্টম সেঞ্চুরি।
দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসাবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসাবে সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রিয়াদও তার প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেছিলেন রিয়াদ।
১১৯ বলে ১২১ রান করে আউট হন সাকিব। দলীয় ২১৯ রানে বেন স্টোকসের ইয়র্কার ডেলিভারিতে বোল্ড হন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথে সাকিব ১২টি চার মারেন ও একটি ছক্কা হাঁকান। সাকিব ফেরার পর মোসাদ্দে নেমে ঝড় তুলেছিলেন। কিন্তু তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১৬ বলে ২৬ রান করে তিনি ফিরে যান সাজঘরে। ৪৪তম ওভারে স্টোকসের বলে আর্চারের হাতে ক্যাচ হন তিনি।
রিয়াদ শুরু থেকেই সংগ্রাম করছিলেন। পায়ে ব্যথা নিয়ে খেলছিলেন তিনি। ৪১ বলে ২৮ রান করে তিনি আউট হন ৪৫তম ওভারে। ৪৬তম ওভারে সাইফউদ্দিনকে বোল্ড করেন স্টোকস। ৪৯তম ওভারে মিরাজ ও মোস্তাফিজকে আউট করেন জফরা আর্চার।
এর আগে বাংলাদেশের বোলারদের সাদামাটা বোলিং আর ফিল্ডারদের বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগ নিয়ে রানের পাহাড় গড়ে তুলে ইংল্যান্ড। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৮৬ রান সংগ্রহ করে ইংলিশরা। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের এটি সেরা স্কোর। তাছাড়া এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এটি সেরা স্কোর।
ইংল্যান্ডের এই বড় স্কোর গড়ার পেছনে মূল ভূমিকা রাখেন জ্যাসন রয়। ১২১ বলে ১৫৩ রান করেন তিনি। ৪৪ বলে ৬৪ রান করেন জস বাটলার। ৩৫ রান করেন ইয়ন মরগ্যান। ৫১ রান করেন জনি বেয়ারস্টো। ৮ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত থাকেন ক্রিস ওয়েকস। ৯ বলে ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন লিয়াম প্লানকেট। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজা ১টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ২টি, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২টি ও মোস্তাফিজুর রহমান ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ১০৬ রানে জয়ী ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ড ইনিংস: ৩৮৬/৬ (৫০ ওভার)
(জ্যাসন রয় ১৫৩, জনি বেয়ারস্টো ৫০, জো রুট ২১, জস বাটলার ৬৪, ইয়ন মরগ্যান ৩৫, বেন স্টোকস ৬, ক্রিস ওয়েকস ১৮*, লিয়াম প্লানকেট ২৭*; সাকিব আল হাসান ০/৭১, মাশরাফি বিন মর্তুজা ১/৬৮, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২/৭৮, মোস্তাফিজুর রহমান ১/৭৫, মেহেদী হাসান মিরাজ ২/৬৭, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ০/২৪)।
বাংলাদেশ ইনিংস: ২৮০ (৪৮.৫ ওভার)
(তামিম ইকবাল ১৯, সৌম্য সরকার ২, সাকিব আল হাসান ১২১, মুশফিকুর রহিম ৪৪, মোহাম্মদ মিথুন ০, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২৮, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ২৬, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৫, মেহেদী হাসান মিরাজ ১২, মাশরাফি বিন মর্তুজা ৪*, মোস্তাফিজুর রহমান ০; ক্রিস ওয়েকস ০/৬৭, জফরা আর্চার ৩/২৯, লিয়াম প্লানকেট ১/৩৬, মার্ক উড ২/৫২, আদিল রশীদ ১/৬৪, বেন স্টোকস ৩/২৩)।
ম্যাচ সেরা: জ্যাসন রয় (ইংল্যান্ড)।