সড়কে শৃংখলা আনতে হবে

18

আগের যেকোনো বছরের তুলনায় এবার ঈদ যাত্রা ছিল অনেকটাই স্বস্তির। যানজট তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিল। কিছু ট্রেন দেরিতে ছাড়লেও যাত্রীরা আগের তুলনায় অনেক স্বচ্ছন্দে যেতে পেরেছে। ট্রেনের সংখ্যাও ছিল বেশি। লঞ্চেও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় অন্যান্য বছরের তুলনায় কম ছিল। ভাড়া নিয়ে কিছু অভিযোগ থাকলেও অতীতের মতো প্রবল ছিল না। ট্রেন, বাস ও লঞ্চের টিকিটও মিলেছে অনেক সহজে। সর্বোপরি দুর্ঘটনার সংখ্যাও ছিল অনেক কম। ট্রেনে কিংবা নৌপথে কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সড়কেও দুর্ঘটনা কমই হয়েছে। তার পরও শুধু ঈদের দিন ও তার পরদিন ৪০ জনের মতো মানুষের প্রাণ গেছে সড়কে, আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। এবার দুর্ঘটনায় প্রাধান্য পেয়েছে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা। কয়েকটি বাসও দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে। ফরিদপুরে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেলে ছয়জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। লালমনিরহাটে পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্মৃতিসৌধে ধাক্কা লাগলে চারজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়। গাজীপুরে চার মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে একজন নিহত ও সাতজন আহত হয়। পিরোজপুরে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়। হানিফ উড়াল সেতুর পৃথক স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই মোটরসাইকেল ছিটকে পড়ে গেলে দুজন নিহত ও তিনজন আহত হয়। ঢাকার মিরপুরে পাল্লা দিয়ে চলা দুই বাসের চাপায় তিনজন আহত হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা বাস দুটি ভাঙচুর করে ও একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
দুর্ঘটনার ধরন দেখে বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোই এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। তাই শুধু সড়ক ঠিক করলেই হবে না, চালকদের নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। আর মোটরসাইকেলকে অনেকেই একটি বিপজ্জনক বাহন হিসেবে উল্লেখ করছেন। এরা রাস্তায় ন্যূনতম নিয়ম-কানুন মানে না। ডানে-বাঁয়ে যখন যেদিকে খুশি ঘুরিয়ে দিয়ে আগে যাওয়ার চেষ্টা করে। আর রাস্তা ফাঁকা পেলে তো কথাই নেই। ১০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি গতিতে গাড়ি চালাতে শুরু করে। ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিনের দুর্ঘটনাগুলো অতিরিক্ত গতির কারণেই ঘটেছে বলে মনে করেন তাঁরা। অতিরিক্ত গতিতে চালাতে গিয়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছ বা স্মৃতিসৌধে গিয়ে ধাক্কা দিয়েছে কিংবা উল্টে গিয়ে খাদে পড়েছে।
সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে অনেক আন্দোলনও হয়েছে। কিন্তু সড়কে যে শৃঙ্খলা ফিরছে না তারই প্রমাণ সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো। প্রয়োজনে সড়কে গতিমাপক যন্ত্র বসাতে হবে। হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগকে আরো সক্রিয় করতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে গতিসীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে। কোনো চালক নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করলেই তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা চাই, আগামী ঈদ যাত্রা শুরু হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।