চিকিৎসায় অনিয়ম দূর হোক

42

জনকল্যাণে নিবেদিত সরকারের লক্ষ্যই থাকে কী উপায়ে প্রান্তিক ও দুস্থ মানুষের জীবনযাপন একটু সহজ করে তোলা যায়। এই দায়িত্ববোধ থেকেই সরকার সামাজিক নিরাপত্তার বার্ষিক বাজেট বাড়িয়ে থাকে। কিডনিসহ পাঁচ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত গরিব রোগীদের চিকিৎসার জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। সারাদেশ থেকে ৩০ হাজার রোগীকে যাচাই-বাছাই করে এই সহায়তা প্রদানের ঘোষণা আসছে আগামী বাজেটে। এক্ষেত্রে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক ও প্যারালিসিসে আক্রান্ত রোগীরা সহায়তা পাবেন। উল্লেখ্য, চলতি বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ১৫ হাজার রোগী আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন।
রোগশোক বলে-কয়ে আসে না, ব্যাধি মানে না শ্রেণীপেশা। কারও হয়ত ব্যাঙ্কক-সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আছে। আবার কারও সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যের বেডে থেকেও ওষুধপথ্য কেনার আর্থিক সামর্থ্য থাকে না। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু রাষ্ট্রের একটা দায়িত্ব আছে। রাষ্ট্রের কাছে প্রতিটি নাগরিকেরই সমান মর্যাদা থাকার কথা। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলেই কেবল উপকারের পরিকল্পনা করা যায়, অন্যথায় নয়।
বর্তমান সরকার জনগণের সরকার, জনগণের কল্যাণের সরকার। তাই প্রতিটি মৌলিক মানবিক প্রয়োজন মেটানোর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গৃহীত হতে দেখছে দেশবাসী। এই ধারাতেই সর্বশেষ সংযোজন ত্রিশ হাজার দরিদ্র রোগীর জন্য অর্ধ লাখ টাকার চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা। সরকারের এই উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য।
প্রসঙ্গত, দেশে বেসরকারী চিকিৎসা খাত সম্পর্কে মাঝে মধ্যে এমন সব তথ্য গণমাধ্যমে আসে যা পড়ে কষ্টে মুষড়ে পড়তে হয়, কখনওবা ইচ্ছে করে ক্ষোভে ফেটে পড়তে। মানুষের মানবতা আজ উল্টোপথে যাত্রা করছে। অনেক বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অনুমোদন পাওয়ার পর শর্ত ভঙ্গ, অব্যবস্থাপনা ও ভুল চিকিৎসা প্রদানের অভিযোগ উঠে থাকে। সম্প্রতি এসব অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত একের পর এক বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিককে জেল-জরিমানাও করেছে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) নামে উচ্চ চিকিৎসা ফি আদায় করছে অনেক হাসপাতাল। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা ও উপকরণ ছাড়াই চলছে রাজধানী সহ দেশের কিছু হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। অভিযোগ উঠেছে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মেডিক্যাল উপকরণ ও ওষুধের পরিমাণ দেখিয়ে বিল বাড়িয়ে দেয়া হয়।
মানুষের রোগব্যাধিকে পুঁজি করে আর কত মুনাফা লুটবে এসব অর্থলোভী বেসরকারী ক্লিনিক-হাসপাতাল? সব কিছুরই নৈতিক একটা দিক রয়েছে। শুধু অর্থের লোভে মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে শেষ পর্যন্ত পার পাওয়া যাবে কি? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি, বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোর সেবার মান এবং নানা অনিয়ম মনিটর করে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিন। আমরা দেশটাকে একটা সুন্দর জায়গায় নিয়ে যেত চাই। সেখানে এ জাতীয় কদর্য বাণিজ্য ও প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।