বিশ্বনাথে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ইউপি সদস্য-পুলিশসহ আহত ১২, পিতাপুত্রসহ আটক ৪

36
বিশ্বনাথে সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে কয়েকজন।

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
পূর্ব বিরোধের জের ধরে বিশ্বনাথে পুলিশের উপস্থিতিতে চাচা ও ভাতিজা পক্ষের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য, পুলিশ ও নারীসহ ১২জন আহত হয়েছেন। সোমবার বিকেলে উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামের চাচা জিয়া উদ্দিন ও ভাতিজা সাইফ উদ্দিন পক্ষের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার এ ঘটনা ঘটে। হামলায় উভয় পক্ষের আহতদেরকে সিলেট ওসমনাী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ১২জনের মধ্যে ৪জন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও সিলেট ওসমানী হাসপাতালে উভয় পক্ষের ৮জন ভর্তি রয়েছেন। জিয়া উদ্দিন পক্ষের আহতরা হলেন, আব্বাস আলীর পুত্র আবদুল মজিদ (৫০), মনোহর আলীর পুত্র ইরন মিয়া (৪০), আপ্তাব আলীর স্ত্রী আয়না বিবি (৫০), শফিক আলীর পুত্র আতিকুর রহমান (১৯) ও আশিক আলীর পুত্র ইমন মিয়া (১৮)।
আর সাইফ উদ্দিন পক্ষের আহতরা হলেন শফিক উদ্দিনের পুত্র সাইফ উদ্দিন (২৯), রুবেল উদ্দিন (২৮), মৃত সামছুদ্দিনের পুত্র জামায়াত নেতা জমির উদ্দিন (৩৫), মৃত আবদুল জলিলের পুত্র সুহেল মিয়া (৩২) ও মৃত সিরাজ উদ্দিনের পুত্র জামাল উদ্দিন (৫৫)। এদের মধ্যে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে জিয়া উদ্দিন পক্ষের আতিকুর রহমান (১৮), ইরন মিয়া (৪০) ও ইমন মিয়া (১৮) মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যদিকে হামলা ও পাল্টা হামলায় থানা পুলিশের কনস্টেবল মামুন এবং পুলিশের লাটি পেটায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আমির উদ্দিন আহত হয়েছেন।
এদিকে ঘটনার পর থানা পুলিশ জিয়া উদ্দিনসহ তার চাচা আপ্তাব উদ্দিন, চাচাতো ভাই আপ্তাব উদ্দিনের ছেলে জুয়েল মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আর থানায় আটক থাকা পিতা ও ভাইকে দেখতে গেলে জুয়েলের ভাই রুমেল আহমদকেও আটক করে পুলিশ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাড়ির সীমানা নিয়ে কিশোরপুরের জিয়া উদ্দিন ও সাইফ উদ্দিনদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরুধ চলে আসছে। এনিয়ে সম্প্রতি উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর এলাকাবাসী বিষয়টি আপোসে নিষ্পত্তি করতে চাইলে সাইফ উদ্দিন পক্ষ পঞ্চায়েতকে অবজ্ঞা করেন। এ জন্য প্রতিপক্ষ জিয়া উদ্দিনের পক্ষ নিয়ে সাইফ উদ্দিন পক্ষকে পঞ্চায়েত থেকে বহিস্কার করেন এবং জমি ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। পঞ্চায়েতের কথা অমান্য করে গতকাল সোমবার যোহরের নামাজ আদায় করতে সাইফ উদ্দিন পক্ষ মসজিদে গেলে পঞ্চায়েত ও সাইফ উদ্দিন পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় জরুরী সেবা পেতে সাইফ উদ্দিন পক্ষের জামাল উদ্দিন ৯৯৯ নাম্বারে কল করেন। এরই প্রেক্ষিতে বিশ্বনাথ থানার এসআই রসুল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইফ উদ্দিন, রুবেল উদ্দিন ও জামায়াত নেতা জমির উদ্দিন প্রতিপক্ষ জিয়া উদ্দিন পক্ষের ওপর হামলা করে। এ সময় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ৪জন গুরুতর আহত হন। পরে জিয়া উদ্দিন পক্ষ আত্মরক্ষার্থে প্রতিপেক্ষর ওপর পাল্টা হামলা চালায়। হামলা ও পাল্টা হামলায় থানা পুলিশের কনস্টেবল মামুন এবং পুলিশের লাটি পেটায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আমির উদ্দিন আহত হন। পুলিশ আহত হওয়ার পর পুলিশ ও স্ইাফ উদ্দিন পক্ষ জিয়া উদ্দিন পক্ষের ঘরে ঢুকে হামলা চালায়।
আপ্তাব আলীর স্ত্রী আয়না বিবির দাবি তাদের ঘরে হামলা চালিয়ে ঘরে থাকা স্টিল আলমারী ভেঙ্গে নগদ প্রায় ২০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করা হয়েছে। আর সাইফ উদ্দিনের দাবি পুলিশকে সাথে নিয়ে মসজিদে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষ তাদের উপর হামলা করেছে।
বিশ্বনাথ থানার এসআই রসুল হোসেন বলেন, ৯৯৯ থেকে আমাদের কাছে কল আসলে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদী জামাল উদ্দিনের কাছে বিষয় জেনে তাদেরকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে জিয়া উদ্দিন গংরা আমাদের উপর হামলা করে।
চার জনকে আটকের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানায় অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।