জনবান্ধব বাজেট প্রত্যাশা

26

আগামী ১১ জুন বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে এবং ১৩ জুন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর প্রথম বাজেট পেশ করবেন। সবারই দৃষ্টি এখন বাজেটের দিকে। নতুন বাজেট কেমন হবে তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। চলছে বাজেটপূর্ব আলোচনা। দেশে উন্নয়নের যে গতিধারা সূচিত হয়েছে তার সঙ্গে সংগতি রেখে বাজেট প্রণয়নের কথা বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। ব্যবসায়ীরাও তাঁদের দাবিদাওয়া তুলে ধরছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উন্নয়ন যাতে সুষম হয় এবং ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান না বাড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আসছে বাজেটে মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়ানো হবে না, বরং করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা হবে।
এক বৈঠকে আলোচকরা বহু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, দুর্নীতি বন্ধ করা এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে আরো তৎপর হওয়া। ব্যাংকের ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার কথা অনেক দিন ধরে বলা হলেও তা হয়নি। কোনো কোনো ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের ২০ শতাংশ সুদেও ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। তাঁরা মনে করেন, ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে সবচেয়ে জরুরি হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দেশে বিনিয়োগ ক্রমে বাড়লেও তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না। স্থানীয় বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বিনিয়োগের বদলে বিদেশে দেদার অর্থপাচার হচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থান সেভাবে বাড়ছে না। বেকার থাকা তরুণ-যুবকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। অবকাঠামোর অভাবও বাংলাদেশে বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগ দিলেও রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় তা দ্রুত করা যাচ্ছে না। এখনো বাংলাদেশে জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায় অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। আলোচকরা এর জন্য রাজস্ব খাতের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকেই মূলত দায়ী করেছেন। অর্থমন্ত্রী দুর্বলতাগুলো স্বীকার করে বলেন, পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করের আওতা বাড়াতে প্রতিটি উপজেলায় আয়কর অফিস স্থাপন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় লোকবল দেওয়া হবে। ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়সহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করা হবে। এ ছাড়া রাজস্ব খাতের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করতে আরেকটি কমিশন গঠন করা হবে। আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যাতে বিদেশে অর্থপাচার করা না যায় সে জন্য নৌ ও স্থলবন্দরসহ প্রতিটি বন্দরে আধুনিক স্ক্যানার মেশিন বসানো হবে।
আমরা আশা করি, আসন্ন বাজেট জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অনেক বেশি সফল হবে। আসন্ন বাজেট হবে জনবান্ধব, বিনিয়োগ ও ব্যবসা অনুকূল এবং সর্বোপরি উন্নয়ন সহায়ক।