সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সৈয়দ সিরাজুল আব্দালের নামে স্থাপনার নামকরণ চান তাঁর পরিবারের সদস্যরা

8

স্টাফ রিপোর্টার :
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনীর বন্দিশালায় শাহাতদ বরণকারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সিরাজুল আব্দালের নামে কোন স্থাপনা কিংবা সড়কের নামকরণ করার দাবি জানিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে এক আত্মত্যাগী দেশপ্রেমিকের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তারা। সিলেট ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন বধ্যভূমিতে বহু শহীদদের মত তাকেও হত্যা করা হয়েছে-সেখানে তার কবরের নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করে দিতে সেনাপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। বৃহস্পতিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে শহীদ সৈয়দ সিরাজুল আব্দালের ছেলে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর ডা. সৈয়দ জামিল আব্দাল এ দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, তার বাবা শহীদ সৈয়দ সিরাজুল আব্দাল লাক্কাতুরাহ চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকুরিরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরুতেই বাগানের শ্রমিকদের সংগঠিত করে সিলেটে হানাদারদের প্রতিরোধে সড়ক অবরোধ করেছিলেন। এ অপরাধে তাকে বন্দি হতেও হয়েছিল। পরে মুক্তিবাহিনী তাকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে। এরপর তিনি মৌলভিবাজারের পাল্লাকান্দিতে শ্বশুড় বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে পাক দোসরদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় আমরা তিন ভাইবোন অনেক ছোট ছিলাম। আমাদের মা অনেক কষ্টে আমাদের নিয়ে দিন যাপন করেন। ইচ্ছা সত্ত্বেও আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা এবং আমাদের শহীদ পরিবারের মর্যাদার সীমিত চেষ্টা চালাই। আমরা অনেক কষ্টে একটা পর্যায় পৌঁছাই এবং আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির এবং আমার বাবার কবরটি শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাই। শেষ পর্যন্ত তাকে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। তবে এখনও তার কবরটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ৪৭টি বছর আমার শহীদ বাবার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি ও কবরের সন্ধানে কাটিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার সহ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে সকল তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করায় স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর পর আমার বাবাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ জন্য মহান আল্লাহ্র কাছে শোকরিয়া এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমি অনেক ছোট ছিলাম, তাই আমি নিজে থেকে মনে করে কিছু বলতে পারবো না। আমার মায়ের কাছ থেকে, মুক্তিযুদ্ধের ৩নং সেক্টরের সংশ্লিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে এবং বিভিন্ন পত্রিকা, বই এবং কিছু চিঠিপত্র থেকে যা জানতে পেরেছি, ‘মৌলভীবাজার থেকে ধরে আনার পর বাবাকে বর্তমান সিলেট ক্যাডেট কলেজ (তৎকালীন সিলেট রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল) এ বন্দি করে রাখা হয় এবং পাশের কক্ষে বন্দী ছিলেন আমিনুর রশিদ চৌধুরী। আমিনুর রশিদ চৌধুরীর ভাষ্য মতে ১৯শে মে ১৯৭১ সালে এই অকুতভয় বীর সৈনিককে চক্ষু বেঁধে এবং হাত পিছন থেকে বেঁধে নিয়ে যায় বন্দীখানা থেকে আর ফিরে আসেননি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য জীবন দেয়া এই বীর সৈনিক। এ থেকে বুঝা যায়, বর্তমান সিলেট ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ের বধ্যভূমিতে আরও শহীদদের মত তাঁকে হত্যা করা হয়। আজ পর্যন্ত আমরা তাঁর কবর কোথায় জানিনা।’
তিনি বলেন, আমার বাবা শহীদ সৈয়দ সিরাজুল আব্দাল ১৯৩১ সালের ১৮ মে হবিগঞ্জ জিলার আউশপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশের পর ১৯৫৭ সালে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডের নর্দান আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফাস্টে টি টেকনোলজি পড়তে যান। পড়াশুনা শেষ করে তিনি বেলফাস্টের বিখ্যাত একটি কোম্পানিতে চাকুরির সুযোগ পান। কিন্তু দেশ-মাতৃকার টানে দেশে ফিরে আসেন। সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ জামিল আব্দাল তারা বাবার নামে সিলেটের কোনো প্রতিষ্ঠান অথবা রাস্তার নামকরণের দাবি জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ সৈয়দ সিরাজুল আব্দালের স্ত্রী সৈয়দা সাকিনা আব্দাল ও কন্যা সৈয়দা সায়মা আহমদ উপস্থিত ছিলেন।