আল কুরআনে বর্ণিত বিশেষ দোয়া

208

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
(পূর্ব প্রকাশের পর)
মুআয জাবাল (রা.) এই দোয়াটি পাঠ করে আমীন বলতেন।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ আলাইহি ওায়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত কোনো রাত্রে পাঠ করবে সে রাত্রে এই দুই আয়াতই তার জন্যে যথেষ্ট হবে।-বুখারী, মুসলিম। হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আমাকে আল্লাহ পাকের আরশের নিুবর্তী ভান্ডার থেকে দান করা হয়েছে, যা ইতিপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি।-মুসনাদে আহমদ উকবা আমের (রা.) বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তোমরা সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ কর; কেননা, আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এর দ্বারা বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন। হযরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা সূরা- বাকারায় এমন দুটি আয়াত দ্বারা খতম করেছেন যেগুলি তিনি আমাকে আরশের নিচের অমূল রতœভান্ডার থেকে দান করেছেন। সুতরাং তোমরা নিজেরা এই আয়াতগুলো শেখ এবং তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে শেখাও। কারণ এ দুটি আয়াত সালাত, কুরআন ও দোয়া।-মুসতাদরাকে হাকেম
হেদায়াতের উপর অবিচলতার দোয়া : সুদৃঢ় ও পরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিরা বলেন, কুরআনের সকল আয়াতই আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত, এর সবগুলিই আমরা বিশ্বাস করি। তারা আল্লাহ পাকের নিকট প্রার্থনা করে আরও বলে, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরকে সত্য-লঙ্ঘনকারী করবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। হে আমাদের রব, আপনি মানবজাতিকে একদিন একত্রে সমাবেশ করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই আল্লাহ নির্ধারিত সময়ের ব্যতিক্রম করেন না।” -আলো ইমরান ৮-৯। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি কোনো বস্তু হারানোর পর দ্বিতীয় আয়াতখানি পাঠ করে এ দোয়াটি পড়ে তবে সে ওই হারানো জিনিসে ফিরে পায়।
গুনাহ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া : কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহভীরু মুত্তাকীদের পরিচয় প্রদান করা হয়েছে। একস্থানে বলা হয়েছে তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র জীবন এবং আল্লাহ পাকের পূর্ণ সন্তুষ্টি। তাকওয়া অবলম্বনকারী তারাই, যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আল্লাহ পাকের অনুগত, আল্লাহর পথে ব্যয়কারী এবং ঊষাকালে আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থী। যারা আল্লাহ পাকের নিকট বলে- ‘‘রাব্বানা আমান্না মাগফির লানা ওয়াক্বিনা আযাবান নার’’ ‘‘হে আমাদের পালনকর্তা আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। Ñআলে ইমরান ১৬”
সংকট রাব্বানীদের দোয়া : উহুদ সত্তরজন মুসলিমের শাহাদাত লাভ এবং অনেকের আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে কোনো কোনো মুসলমানের মন দুর্বল হয়ে পড়ে। আল্লাহ পাক সকলের মনে সাহস সঞ্চার এবং করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণের উদ্দেশ্যে বলেন, বিভিন্ন যুগে বহু নবী যুদ্ধ করেছেন। তাদের সঙ্গে অনেক আল্লাহওয়ালা ছিল। আল্লাহর পথে তাদের কখনও বিপর্যয় ঘটলে তারা হীনবল হয়নি, দুর্বল হয়নি এবং নতও হয়নি। কঠিনতর পরিস্থিতিতেও তারা ধৈর্যধারণ করেছে। তখন এ আল্লাহওয়ালাদের একমাত্র প্রার্থনা ছিল ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমদের পাপ এবং আমাদের কার্যে সীমালঙ্ঘন ক্ষমা করুন, আমদের পা সুদৃঢ় রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন। -আলে ইমরান ১৪৭
ভয়-ভীতির সময়ের দোয়া : হয় তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের পনের তারিখ উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত। যুদ্ধ থেকে ফেরার পর মুশরিকগন একে অপরকে ভর্ৎসনা দিতে থাকে যে, তোমরা মুহাম্মাদকে হত্যা করতে পারনি। তোমরা তাদের শক্তি-সামর্থ্য ধ্বংস করেছ, তাদেরকে হত্যা ও আহত করেছ, কিন্তু তাদেরকে সমূলে উৎপাটিত করতে পারনি। অতএব পুনরায় মদীনায় আক্রমণ করতে হবে।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর মাধ্যমে এ কথা জানতে পেরে পরদিন ষোলই শাওয়াল রবিবার সকালে হুকুম দেন, গতকাল যারা উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, তাদেরকে পুনরায় প্রস্তুত হয়ে শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। অথচ তখন সকলেই ছিলেন ক্লান্ত, আহত ও অবসন্ন। তৎসত্ত্বেও সকলেই বিপুল উদ্দীপনাসহ প্রস্তুত হয়ে শত্র“ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। অথচ তখন সকলেই ছিলেন ক্লান্ত, আহত ও অবসন্ন। তৎসত্ত্বেও সকলেই বিপুল উদ্দীনাসহ প্রস্তুত হয়ে শত্র“ বাহিনীকে পশ্চাদ্ধাবনের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওয়ানা হন। তারা মদীনা থেকে আট মাইল দক্ষিণে অবস্থিত ‘হামরাউল আসাদ’ নামক জায়গায় অবস্থান করেন। এ সংবাদ জানতে পেরে মুশরিকদের যুদ্ধের খায়েশ হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তখন তারা মুসলিমদেরকে ভীতি প্রদর্শনের এক কুটকৌশল অবলম্বন করে। তাদের কাফেলা মদীনায় আসছিল। এ কাফেলার লোকদেরকে ওরা বলল, তোমরা মুসলিমদেরকে সমূলে উৎখাত করার জন্য প্রস্তুত হয়েছি। অচিরেই তাদের উপর হামলা চালাব। তারা এ সংবাদ পৌছানোমাত্র সকল মুসলমান অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে একমাত্র আল্লাহ পাকের প্রতি নির্ভরতা প্রকাশ করে বলেন- ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।’Ñ আলে ইমরান ১৭৩। হাদীস শরীফে এ দোয়াটির অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হযরত ইবরাহীম (আ.) কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন তাঁর সর্বশেষ কথা ছিল ‘হাসবুনাল্লাহ ওয়ানি’মাল ওয়াকীল।’ Ñসহীহ বুখরী। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চিন্তা বৃদ্ধি পেলে তিনি মাথায় ও দাড়িতে হাত বুলাতেন। অতঃপর লম্বা নিশ্বাস নিতেন ‘‘হাসবিয়াল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিলু’’ এবং পাঠ করতেন। হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-‘হাসবিয়াল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিলু’ দোয়াটি সকল ভীতিকর বিষয় থেকে নিরাপত্তা দেয়।
বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণের দোয়া : আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেছেন, আমি মুমিনদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। এরূপ কঠিন পরীক্ষার সময়ও যারা ধৈর্যধারণ করবে, তাদের জন্য শুভ-সংবাদ। তাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অশেষ দয়া বর্ষিত হয়, এবং এরাই সৎপথে পরিচালিত। ধৈর্যশীল তারাই যাদের উপর বিপদ অপতিত হলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন’ ‘আমরা সকলে তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই আমরা প্রত্যাবর্তনকারী।’-বাকারা ১৫৬
বিপদে আপদে এই দোয়া পাঠ করার অনেক ফযীলত রয়েছে। উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যেকোনো বান্দা বিপদগ্রস্থ হয়ে যদি পাঠ করে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ তবে আল্লাহ তাআলা তাকে উত্তমভাবে পুরস্কৃত করেন এবং সেই মুসীবতের পরিবর্তে উত্তম বদলা দান করেন উম্মুল মুমিনীন বলেন, আমার স্বামী আবু সালাম মারা যাওয়ার পর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথামতো আমল করেছি। পরবর্তীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বিবাহের মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাকে উত্তম বদলা দান করেন। হযরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মালাকুল মউত, তুমি কি আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছ? তুমি কি তার নয়নের মণি ও কলিজার টুকরা কে কবজ করেছ? ফেরেশতা বললেন হাঁ। আল্লাহ পাক বলেন, আমার বান্দা কী বলেছে? মালাকুল মউত বলেন সে আপানার প্রশংসা করেছে এবং ‘‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’’ পাঠ করেছে। আল্লাহ তাআলা তখন বলেন, জান্নাতে তার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং সে গৃহের নাম রাখ বাইতুল হামদ।-জামে তিরমিযী; মুসনাদে আহমদ হোসাইন ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, কোনো মুসিলম নর-নারী বিপদগ্রস্ত হওয়ার অনেকদিন পর বিপদের কথা স্মরণ করে যদি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’’ তবে আল্লাহ পাক তাকে বিপদের দিন পাঠ করার সওয়াব দান করবেন।
জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের দোয়া : আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আকাশমন্ডলই ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানী লোকদের জন্য। জ্ঞানী তারাই যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এক কাথায় সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং যারা আল্লাহ নিকট প্রার্থনা করে-‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি এই সকল বস্তু অনর্থক সৃষ্টি করেছেন। আপনি এই সকল বস্তু অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি কাউকেও অগ্নিতে নিক্ষেপ করলে তাকে তো নিশ্চয় লাঞ্ছিত করলেন এবং জালিমদের রব, আমরা এক আহ্বানকারীকে ঈমানের দিকে এ আহ্বান করতে শুনেছি যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন। সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব, আপনি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন, আমাদের মন্দ কার্যগুলি দূরীভূত করুন এবং আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের সহগামী করে মৃত্যু দান করুন। ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা’ হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার রাসূলদের মাধ্যমে আমাদেরকে যে সওয়াব ও জান্নাতের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন তা আমাদেরকে দিন এবং কিয়ামতে দিন আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না। নিশ্চয় আপনি প্রতিশ্র“তির ব্যতিক্রম করেন না।’Ñআলে ইমরান ১৯১-১৯৪। আল্লাহ পাক এ সকল জ্ঞানী লোকের প্রার্থনার সাড়া দেন। তিনি তখন বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কর্মে বিনষ্ট কোনো নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না। মুনাজাতের এ আয়াত দুটি পাঠ করার অনেক ফযীলত রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষরাতে এই আয়াতগুলি পাঠ করতেন। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের তৃতীয় প্রহরে শয্যা ত্যাগ করে আকাশের দিকে দৃষ্টি উত্তোলন করে এ আয়াতগুলো পাঠ করেন। অতঃপর ভালোভাবে অযু করে তাহাজ্জুদ আদায় করেন।-সহীহ বুখারী
পিতা মাতার জন্য দোয়া ঃ আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম এর সকল উম্মতকে পিতামাতার জন্য দোয়া করতে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে হুকুম দিয়েছেন, সকলে যেন পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন, পিতামামার উভয়ে বা কোনো একজন বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তি, উপেক্ষা, অবজ্ঞা, ক্রোধ ও ঘৃণাসূচক কোনো কথা বলা যাবে না এবং তাদেরকে ধমক দেওয়া যাবে না। তাদের সঙ্গে সর্বদা সম্মানসূচক নম্র কথা বলতে হবে। আল্লাহ তাআলা মমতাবেশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমতি করবে এবং সর্বদা তাদের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট এই প্রার্থনা করবে। ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমার পিতামাতার প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। -বনী ইসরাইল ২৪, এরূপ গুরুত্ব সহাকারে মাতাপিতার খেদমত ও তাদের জন্য দোয়া করার নির্দেশ থাকার কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওায়াসাল্লাম উভয়কে বা কোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পাওয়ার পর তাদের খেদমত করে জান্নাত লাভ করতে পারল না, সে অভিশয় হতভাগা।- মুসনাদে আহমদ
হিজরতের দোয়া : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তের বছর মক্কায় অবস্থান করেন। তিনি আল্লাহ পাকের হুকুমে আউয়াল মাসের শুরুর দিকে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন। হিজরতের পূর্ব, মুহূর্তে আল্লাহ পাক তাকে এ প্রার্থনা করতে বলেন-‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে দাখিল করুন কল্যাণের সঙ্গে এবং আমাকে নিষ্ক্রান্ত করবেন কল্যাণের সঙ্গে এবং আপনার নিকট থেকে আমাকে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি।’ Ñসূরা বনী ইসরাইল ৮০
আল্লাহ মহাত্ম্য বর্ণনা : আল্লাহ তাআলা সূরা বনী ইসরাঈলের সর্বশেষ আয়াতে সকল মুুমিনকে আরও একটি দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছেÑ‘বল সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই, যিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেন না, তাঁর রাজত্বে কোনো অংশীদার নেই এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তার অভিভাবক প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং সসম্ভ্রমে তার মাহাত্য ঘোষণা কর। Ñসূরা বনী ইসরাঈল ১১১, এই আয়াতটি তাওরাত শরীফের শেষ আয়াত ছিল।
জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া ঃ এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিম্নোক্ত দোয়াটি করতে বলেন,‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।’Ñসূরা ত্বাহা ১১৪, জ্ঞান বৃদ্ধির দোয়া একটি সর্বব্যাপী ও বহুবিস্তীর্ণ প্রার্থনা। সুতরাং এ দোয়ার মধ্যে অর্জিত ইলম স্মরণে থাকার, অজানা ইলম জ্ঞানায়ত্ব বোধ জাগ্রত হওয়ার প্রার্থনা অধিভুক্ত রয়েছে। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ পাকের মহান দরবারে এ দোয়া অধিক হারে করতেন।
ফয়সালা প্রার্থনা ঃ আল্লাহপাক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন, কাফের সম্প্রদায় যদি আপনার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলে দিন, আমি তোমাদেরকে যথাযথভাবে জানিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা অবশ্যই আপতিত হবে। তবে আমি জানি না তা অত্যসন্ন, না দূরস্থিত। শাস্তি বিলম্বিত হওয়ার দ্বারা শাস্তি সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। হয়তো বিলম্বিত হওয়াও তোমাদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এরূপ বিভিন্নভাবে বোঝানোর পরও যখন তারা হেদায়াত কবুল করেনি, তখন আল্লাহ পাকের অনুমতিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রার্থনা করেনÑ‘হে আমার প্রতিপালক, আপনি ন্যায়ের সঙ্গে ফয়সালা করে দিন। আমাদের প্রতিপালক তো দয়াময়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র সহায়স্থল তিনিই।-সূরা আম্বিয়া ১১২ অর্থাৎ সত্যকে মিথ্যার উপর, আলোকে অন্ধকারের উপর বিজয় দান, করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এই দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করেন। বদর যুদ্ধের দিন সত্য মিথ্যা মীমাংসা হয়। (অসমাপ্ত)