বড়শিতে জল জ্যান্ত মানুষকে গেঁথে চড়ক গাছে ঝুলানোর দৃশ্য দেখলেন কয়েক সহস্রাধিক মানুষ

41
ওসমানীনগরে চড়ক পূজা দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়।

শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
বড়শিতে গাঁথা জল জ্যান্ত মানুষকে চড়ক গাছে ঝুলিয়ে প্রায় ২৫ ফুট শূন্যে ঘুরাতে ঘুরাতে সন্ন্যাসীরা ছুড়ে দিচ্ছেন বাতাসা আর কলা। সন্ন্যাসীদের পিঠে বড়শী বিধে শূন্যে ঘুরে পালন করলেন শিব পূজারই অংশ চড়ক উৎসব। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এই দৃশ্য দেখতে এলাকার কয়েক সহ¯্রাধিক লোক জড়ো হয়েছিলেন ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের পুরুকায়স্থ পাড়া গ্রামের চন্দ্র কুমার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। এ পূজা উৎসবকে ঘিরে এলাকায় যেনো বিভিন্ন বয়সী মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, পুরকায়স্থ পাড়া গ্রামের বাটুল মালাকারের পুত্র রন মালাকার প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আয়োজন করেছেন চড়ক উৎসবটি। এই পূজার মূল আকর্ষণ ছিল কয়েকজন সন্ন্যাসীর বড়শিবিদ্ধ হয়ে শূন্যে ঘোরা। স্থানীয়রা জানান- প্রায় দেড় যুগ ধরে চলে আসছে এ চড়ক পূজা। আর এ পূজাকে ঘিরে স্থানীয় বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে বসে দিন ব্যাপী বর্ণাঢ্য লোকজ মেলা। এ চড়ক মেলার মূল আকর্ষণ বড়শিবিদ্ধ হয়ে শূন্যে ঘোরানো এ দৃশ্য অবলোকনের সাথে-সাথে মেলাায় কেনা কাটা করতে সকাল থেকে হাজির হন এ অঞ্চলের হাজার হাজার নারী-পুরুষ। দুপুরের পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে। বিকেলের মধ্যে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো এলাকা। চারিদিকে সাজ-সাজ রব। পুরো এলাকা জুড়ে উৎসবের আমেজ। বিকেল ৫ টার দিকে কয়েকজন সন্ন্যাসী পার্শ্ববর্তী পুকুরে স্নান করেন। এরপর ৬ জন সন্ন্যাসী মাটির কলসে জল (পানি) ভরে মাথায় নিয়ে আসেন তাদের চড়ক গাছের কাছে। সাড়ে ৫টার দিকে সন্যাসীদের পিঠে দুটি বড়শী বিদ্ধ করা হয়। এ সময় স্মরণ করা হয় মহাদেব শিব ঠাকুরকে। এরপর সন্ন্যাসীদের ১০-১৫ জন পুরুষ ধরাধরী করে ঝুলিয়ে দেন চড়ক গাছে। অপর গাছের অপর প্রান্তে থাকা কপিকলের বাঁশ জোরে-জোরে ঘোরাতে থাকেন ২০-২৫জন যুবক। চড়ক গাছে লটকে দেওয়ার সাথে সাথে কিছু মহিলা তাদের শিশু সন্তানকে তুলে দেন সন্ন্যাসীদের হাতে। তাকে নিয়েই শুন্যে ঘুরতে থাকেন সন্ন্যাসীরা আর এ অবস্থায় ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাতাসা আর কলা।
এভাবেই দীর্ঘক্ষণ বড়শীতে বিধে শুণ্যে ঘুরে নেমে আসেন সন্ন্যাসীরা। সন্যাসীরা জানান- সবাই চড়ক গাছে উঠতে পারে না। এতে সাহস লাগে। শিব ঠাকুরের সন্তুষ্টির জন্যই তারা প্রতি বছর চড়ক গাছে চড়ে থাকেন। শরীরে বড়শী বিধার ফলে বড় ধরণের ক্ষতের সৃষ্টি না হলেও সামান্যই রক্ত বের হয়। কিন্তু এর জন্য কোন ঔষধ লাগে না। চড়ক গাছ থেকে নামিয়ে গাছের গোড়ায় থাকা সিঁদুর টিপে দিলেই হয়। তারা পূর্ব পুরুষদের আমল থেকেই তারা মহাদেবের ভক্ত এবং এ কাজ করে আসছেন। মেলায় দোকান নিয়ে আসা তাহির আলী, বকুল দাসসহ কয়েক জন জানান- বিভিন্ন রকমের পসরার বিকিনিকি ভালই হচ্ছে। সাখা-সিঁদুর বিক্রেতা বিমল সরকার ও বিকিনিকি করছেন তার পণ্য সম্ভার।
পূজার আয়েজকরা জানিয়েছেন- স্বপ্ন আদেশে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ আমরা এ পূজার আয়োজন করছি। চড়ক পূজা মূলত শিব পূজারই অংশ বিশেষ। নানা আনুষ্ঠানিকতায় তা সম্পন্ন করা হয়। গত একমাস যাবৎ আমরা গ্রামে-গ্রামে ঘুরে সবাইকে নিমন্ত্রণের পাশাপাশি সকলের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগীতা নিয়েছি। (গতকাল শুক্রবার) শিব পূজা ও চড়কগাছে সন্যাসীদের ঘোরানোর মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে এ- মিলন মেলার।