ওসমানীনগরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্থাপিত হয়েছে ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ’

94

ওসমানীননগর থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগর উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ’ কক্ষ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের একটি বিদ্যালয়ে ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ’ কক্ষ স্থাপনের পর ব্যাপক সারা পাওয়ায় শীঘ্রই উপজেলার আরও ৭টি ইউনিয়নের একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ’ কক্ষ স্থাপনের কাজ উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এটি দ্রুত বাস্তবায়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন- প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক এটি দ্রুত বাস্তবায়নের ফলে ছাত্রীরা উপকৃত হবেন। ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যেতে মনযোগী হবেন এবং স্বাচ্ছন্দে পাঠদান চালিয়ে যেতে পারবেন। এছাড়া এটি বাস্তবায়নে শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকেও অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ’ কক্ষ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইউএনও’র তত্ত্বাবধানে উপজেলার দয়ামীর সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে সর্ব প্রথম অত্যাধুনিক ভাবে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হয়। ব্যতিক্রর্মী এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নের ফলে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়া উপজেলার আরো সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আনিছুর রহমানের উদ্যোগে দয়ামীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সহযোগিতায় এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার দয়ামীর সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ’ কক্ষ স্থাপন করা হয়। ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ রুম’ নামের ৪১০ বর্গফুটের কক্ষে বিভিন্ন আসবাবপত্র দিয়ে সুসজ্জিত করে তুলা হয়েছে। যার সুবিধা ভোগ করছে বিদ্যালয়ের প্রায় ৭শ’ ছাত্রী। ছাত্রীদের জন্য এমন সুসজ্জিত ও সুবিধা সমৃদ্ধ কক্ষ বাংলাদেশে আর কোনো সরকারি বা এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ে নেই। গত ১৯ ফেব্র“য়ারি এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেনে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম।
বুধবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দয়ামীর সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে আসবাবপত্রসহ নানা প্রয়োজনীয় উন্নত জিনিসপত্র দিয়ে সাজিয়ে-গুছিয়ে ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ’ রুমটি প্রস্তুত করা হয়েছে। কক্ষটি দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় এটি যে কারো নজর কাড়বে। ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ’ কক্ষটির মেঝে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত টাইলস। ছাদের সিলিংয়ে করা হয়েছে উন্নত কারুকাজ। দেয়ালে সাঁটানো রয়েছে বিভিন্ন মনীষীর ছবি। রুমের একপাশে রয়েছে পড়ার চেয়ার-টেবিল এবং অন্যপাশে বসার জন্য উন্নত মানের সোফা। দেয়াল ঘেঁষে রয়েছে একটি ক্যাবিনেট যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। রুমের ভেতরে রয়েছে একটি সুসজ্জিত ওয়াশরুম এবং এর পাশে রয়েছে হাত-মুখ পরিষ্কারের জন্য উন্নতমানের একটি পানির ট্যাপ ও বেসিন। এর পাশেই রয়েছে ড্রেস বা পোশাক পরিবর্তনের কক্ষ, যেখানে অসুস্থতাজনিত কারণে ছাত্রীদের বিশ্রামের জন্য একটি খাটও রাখা রয়েছে। ছাত্রীদের ‘বিশেষ সময়ে’ ব্যবহার করার জন্য ন্যাপকিন প্যাডও রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে কক্ষের ভেতরে মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে। কক্ষটিতে একটি এয়ারকন্ডিশন স্থাপনের প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানা গেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লাভলী বেগম, ও তাহমিনা আক্তার বলেন, আমাদের ফ্যাসিলিটির জন্য নির্মিত কক্ষটি খুব সুন্দর। কক্ষটি ব্যবহার করে আমরা খুবই আনন্দ বোধ করছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়গুলোতে এ ধরণের কক্ষ তৈরীর করার দাবি জানান ওই শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ দুলাল মিয়া বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে ছাত্রীদের জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে এসে এই কক্ষটি ব্যবহার করে অনেক সুবিধা ভোগ করতে পারছে। এ ধরণের মহতি উদ্যোগের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ’ কক্ষ স্থাপনের উদ্যোক্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, আমাদের মেয়েরা বিদ্যালয়ের গিয়ে যেন কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হয় এবং স্বাচ্ছন্দবোধ করতে পারে সেই চিন্তা মাথায় রেখে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমার জানামতে বাংলাদেশের আর কোনো বিদ্যালয়ে এমন ব্যবস্থা নেই। দয়ামীর সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘গার্লস ফ্যাসিলিটিজ’ বাস্তবায়নের পর উপজেলার আরো ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্টানে এটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিয়ে পর্যায়ক্রমে উপজেলা প্রতিটি বিদ্যালয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ইচ্ছা রয়েছে সেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো জানান, সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম মহোদয় জানিয়েছেন পর্যায়ক্রমে সিলেটের প্রতিটি বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সুবিধার জন্য এধরণের উদ্যোগ বাস্তবায় করা হবে।