অন্ত:সত্ত্বা নারীকে হত্যার অভিযোগে স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ি জেল হাজতে

14

স্টাফ রিপোর্টার :
মোগলাবাজারে শারমিন আক্তার শাম্মী (২১) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতারকৃত স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভাসুরকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম আহমদ শাম্মীর মৃত্যুর খবর ও এ ঘটনায় হওয়া মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মামলা ৪ (১৩-০৪-১৯)।
তিনি জানান, এ ঘটনায় গত শনিবার নিহতের বাবা বাদী হয়ে মোগলাবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে স্বামী আবুল হোসাইন, ভাসুর রাহিম উদ্দিন (২৮), শ্বশুর আব্দুল লতিফ (৬০) ও শাশুড়ি মরিয়ম বেগম শিল্পীসহ (৫০) ৪ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
নিহত শাম্মী মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার চেলারচক গ্রামের আব্দুল আজিজ চুনু মিয়ার ২য় কন্যা।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে রাজনগরের মেয়ে শারমিন আক্তার শাম্মীর মোগলাবাজার থানার আবুল হোসাইনের সাথে মোবাইলের মাধ্যমে পরিচয় হয়। অতঃপর উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দীর্ঘদিনের এই প্রেমের ইতি টানতে প্রেমিক দম্পতি ২০১৮ সালের ১১ই নভেম্বর সিলেটের একটি আদালতে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন। চলতি বছরের এক জানুয়ারি আবার তারা ফেঞ্চুগঞ্জের এক স্থানীয় কাজির মাধ্যমে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শাম্মির কাবিন ছিল ৫ লক্ষ টাকা। এরপর ওই প্রেমিক দম্পতির শুরু হয় লুকিয়ে জীবন। আবুল শাম্মীকে নিয়ে নিকট আত্মীয়দের বাসায় বসবাস শুরু করেন। কিছুদিন পর আবুলের নিকট আত্মীয়রা আবুলের বিয়ে করার বিষয়টি পরিবারকে জানায়। বিষয়টি জানতে পেরে আবুল শাম্মিকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়। শুরু হয় উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব। বিষয়টি উভয় পরিবারের মধ্যে জানাজানি হওয়ার পর ২ থানার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের শালিসের মাধ্যমে চলতি বছরের ১৮ মার্চ শাম্মীকে মোগলাবাজারের প্রেমিক আবুলের কাছে (শ্বশুর) বাড়ীতে নেওয়া হয়। পরের কয়েকদিন শ্বশুর বাড়ীতে ভালই কাটে শাম্মির। কিছুদিন পর থেকে শুরু হয় যৌতুকের ৩ লক্ষ টাকার জন্য নির্যাতন।
নিহতের পরিবার আরো জানায়, শ্বশুরবাড়ীর লোকজন শাম্মিকে জানায় তুই’ত আসার সময় কিছুই আনিসনি। তোর বাবার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা এনে দেয়। তা না হলে তর খুব খারাপ হবে। স্বামী ও তার বাবা, মা ও ভাইয়ের কথায় একমত হয়। এদিকে চলতি মাসের ৯ এপ্রিল দুপুরে শাম্মী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার বাবা আব্দুল আজিজ চুনু মিয়াকে জানায় আমার স্বামীর বাড়ীর লোকজন বলছে তোমার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা এনে দেওয়ার জন্য। টাকার জন্য তারা আমাকে নির্যাতন শুরু করেছে। সে সময় শাম্মীর বাবা চুনু মিয়া বলেন, ‘মাগো’ তুমি তাদের বল তোকে একটু সময় দিতে। তোর সুখের জন্য প্রয়োজন হয় ধার করজো করেও আমি টাকা এনে দেবো। মাগো তুই চিন্তা করিস না। আল্লাহ তোকে সাহায্য করবেন। পরে ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় শ্বশুর বাড়ীর লোকজন শাম্মির বাবার মোবাইলে ফোন দিয়ে জানায় শাম্মি বিষ খেয়েছিল আমরা তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেছি। খবর পেয়ে শাম্মির বাবা ওসমানী হাসপাতালে ছুটে যান। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় শাম্মি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পরে শুক্রবার মোগলাবাজার থানা পুলিশের উপস্থিততে স্বামীর এলাকায় জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।
এ ব্যাপারে নিহত শাম্মীর বাবা আব্দুল আজিজ চুনু মিয়া বলেন, আমার মেয়েটি ৩ মাসের অন্ত:সত্ত্বা ছিল। ভাসুর রাহিম উদ্দিন ঔষধ খাইয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। ওই সময় আমার মেয়ে জানিয়েছিল আমার গর্ভের সন্তান ঔষধ খাইয়ে নষ্ট করার কারণে অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তারা আমার মেয়েকে জোরপূর্বক বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে- আমি এর বিচার চাই।
পরে ১৩ই এপ্রিল শারমিনের বাবা বাদী হয়ে স্বামীকে প্রধান ও পরিবারের সকলকে আসামি করে মোগলাবাজার থানায় হত্যা (৪-১৩/০৪/১৯) মামলা করেন। পরে একইদিন এ মামলার ভাসুর রাহিম উদ্দিন (২৮),শ্বশুর আব্দুল লতিফ (৬০) ও শাশুড়ি মরিয়ম বেগম শিল্পীসহ (৫০) ৪ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।