প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা

22

প্রকল্পের কাজের ধীরগতি উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা। অর্থবছরের শেষ দিকে গিয়েও দেখা যায়, বেশির ভাগ প্রকল্পের নির্ধারিত কাজ অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয় না। অনেক প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যায়। এর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় করায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা প্রশাসনের অহেতুক কালক্ষেপণ। সেই সমস্যাটি কাটিয়ে ওঠার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকল্পের বরাবরে সরাসরি অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রকল্প পরিচালকদের স্বেচ্ছাচারিতা বেড়ে যেতে পারে। অনিয়ম উৎসাহিত হতে পারে। এ বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে।
বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এখানে বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ অনেক বেশি হওয়ার অভিযোগ আছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের বিদেশ ভ্রমণ, গাড়িবিলাসের বিষয়টি বহুল আলোচিত। তার পরও দেখা যায়, তিন বছরের প্রকল্প ছয় বছরেও শেষ হয় না। মাঝখানে একাধিকবার বরাদ্দ বাড়ানোর ঘটনা ঘটে। দুর্নীতির অভিযোগও বিস্তর। এ অবস্থায় প্রকল্প পরিচালকদের আরো বেশি আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হলে তাতে অর্থের অপব্যবহার আরো বাড়বে কি না সেটি বিবেচনা করে দেখতে হবে। রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় যাতে না হয় সে জন্য প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিটি কাজের সর্বোচ্চ জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। অনেক সময় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির জন্য বরাদ্দ কাটছাঁট করতে হয়। অধিক প্রয়োজনীয় অন্য প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে অর্থ পুনর্বণ্টনের প্রয়োজন হয়। অর্থ সরাসরি ছাড় হয়ে গেলে সে কাজগুলো সঠিকভাবে করা যাবে কি না তাও বিবেচনায় নিতে হবে।

বাংলাদেশে নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু একটি অনুন্নত দেশ হওয়ায় যেটুকু উন্নয়ন হচ্ছে প্রয়োজন রয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। এসব উন্নয়নকাজের গতি যত ত্বরান্বিত হবে জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সেগুলো তত বেশি ভূমিকা রাখবে। তাই উন্নয়নকাজের গতি ত্বরান্বিত করার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তা করতে গিয়ে অপচয়কে যেন উৎসাহিত না করা হয়, সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। আমরা আশা করি, প্রকল্পের অনুমোদন থেকে শুরু করে সমাপ্তি পর্যন্ত প্রতিটি কাজে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।