শ্রেণী কক্ষে পড়ানো জোরদার হোক

25

উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত সোমবার। সারা দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ১৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৫ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিল ১৪ হাজার ৯৮৮ জন। পরীক্ষার বাকি দিনগুলোতে আরো কতজন অনুপস্থিত থাকবে বা পরীক্ষা দেওয়া থেকে সরে যাবে কে জানে? খবরটি মোটেও সুখকর নয়। যত দূর জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে যত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তার একটি বড় অংশই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে না। অনেকে ঝরেও পড়ে। পরীক্ষার ফরম পূরণ করার পর কেন এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রথম পরীক্ষায়ই অনুপস্থিত, তার কারণ জানা দরকার। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অনেকেরই ধারণা, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না থাকা এবং অকৃতকার্য হওয়ার ভয় থেকেই এদের একটি বড় অংশ পরীক্ষা দিতে আসেনি। যদি তা-ই হয়, তাহলে কলেজগুলোতে দুই বছর ধরে তারা কী শিখেছে? সেখানে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি কতটা ছিল, আর শিক্ষাদানের দুর্বলতা কী পরিমাণ ছিল তাও দেখতে হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রশ্ন ফাঁস একটি বড় সমস্যা হয়েছিল। বিশেষ করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় এর ব্যাপকতা ছিল সবচেয়ে বেশি। সরকার ও প্রশাসনের আন্তরিক উদ্যোগের কারণে দুই বছর ধরে এ সমস্যা প্রায় নেই বললেই চলে। এ বছরও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রশাসনগুলোর উদ্যোগের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। পরীক্ষায় নকলের সমস্যাও এখন কম। বাইরে থেকে খাতা সরবরাহ করা, একজনের পরীক্ষা আরেকজন দেওয়াসহ পরীক্ষাসংক্রান্ত অন্যান্য অনিয়মও অনেক কমেছে। এখন যেটি প্রয়োজন তা হলো, ক্লাসরুমে শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিশ্চিত করা, যাতে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে পারে। সব দায় শিক্ষার্থীর কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে দায়সারাভাবে ক্লাস নিয়ে চলে যাওয়ার যে সংস্কৃতি তার অবসান ঘটাতে হবে। যেসব কলেজের শিক্ষার্থী বেশি অনুপস্থিত সেসব কলেজের শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে। ঘাটতি থাকলে সেগুলো পূরণ করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, অনেক কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অর্ধেকও থাকেন না। বছরের পর বছর শূন্যপদ পূরণ করা হয় না। ইংরেজির শিক্ষকের ঘাটতি চোখে পড়ার মতো। ক্লাসরুমে অডিও ভিজ্যুয়াল শিক্ষার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। অনেক কলেজে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই বলেও জানা যায়। প্রশ্ন ফাঁস, নকল-অনিয়ম বন্ধে সরকার অনেকটাই সফল হয়েছে। আমরা আশা করি, এ ক্ষেত্রেও সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে যাবে।