১ এপ্রিল থেকে বিদেশী টিভিতে দেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ ॥ নির্দেশ অমান্য করলে ব্যবস্থা- তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

71

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী ১ এপ্রিল থেকে বিদেশী টিভি চ্যানেলে আর দেশী কোন প্রণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। নির্দেশ অমান্য করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এতে ডিস্ট্রিবিউটরদের লাইসেন্স বাতিলসহ দু’বছরের কারাদন্ড পর্যন্ত হতে পারে। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে ডাউনলিংকপূর্বক সম্প্রচারিত সব বিদেশী টিভি চ্যানেলে দেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার আগামী ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, এজন্য ইতোমধ্যেই আমরা দু’বার পরিপত্র জারি করেছি। এটি আগামী ১ এপ্রিল থেকেই বাস্তবায়ন করতে চাই।
শনিবার শিল্পকলা একাডেমিতে এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ‘সঙ্কটে বেসরকারী টেলিভিশন’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র (বিজেসি)। সংগঠনের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক রাজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্যসচিব শাকিল আহমেদ।
ডিস্ট্রিবিউটরদের সহযোগিতা কামনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আশা করছি এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। কারণ, দুই মাস আগে থেকে আপনাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৪ টেলিভিশনকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তেত্রিশটি সম্প্রচারে রয়েছে, অন্যগুলো সম্প্রচারের অপেক্ষায়। আমাদের দেশে চ্যানেলের সংখ্যা কলকতার চেয়ে অনেক বেশি। টিভি চ্যানেলগুলো যেন টিকে থাকে, চ্যানেলে যারা চাকরি করেন তাদের চাকরির যেন নিশ্চয়তা থাকেÑ এসব বিষয়ে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এজন্য চ্যানেলগুলোর আয় বাড়াতে হবে। টেলিভিশনগুলো এখনও বিজ্ঞাপননির্ভর। কিন্ত দেশে বিজ্ঞাপনের মার্কেট কমে যাচ্ছে, আর টেলিভিশেনের সংখ্যা বাড়ছে। টেলিভিশনগুলো নিজেরাও অসম প্রতিযোগিতা করে বিজ্ঞাপনের রেট কমিয়ে দিয়েছে। আবার অনলাইন, ফেসবুক, ইউটিউবেও বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে। এসব সমস্যার বড় সমাধান ডিস্ট্রিবিউটরদের হাতে। কারণ, আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে ডাউনলিংকপূর্বক সম্প্রচারিত সব বিদেশী টিভি চ্যানেলে দেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা দন্ডনীয় অপরাধ। এরপরও বাংলাদেশে যেসব বিদেশী চ্যানেল জনপ্রিয়, সেগুলোতে বহুজাতিক ও বেশকিছু বাংলাদেশী কোম্পানির বিজ্ঞাপন অবৈধভাবে প্রচার করা হয়। এ আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হলেই, বছরে ৫শ’ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেশীয় টেলিভিশনগুলো পাবে বলে আমি মনে করি। এই বিজ্ঞাপন পেলে টেলিভিশনে আজ যে সঙ্কট রয়েছে, সেটা কেটে যাবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কেবল অপারেটররা লাইন দিয়ে যে টাকা আয় করে সেখান থেকে একটা অংশ টেলিভিশন মালিকদের দেয়া যায় কিনা বিষয়টি খুঁজে বের করা হচ্ছে। এ জন্য কেবল অপারেটর ও টেলিভিশন মালিকদের বসে একটি প্রস্তাব তৈরির পরার্মশ দেন তথ্যমন্ত্রী। এর আগে গত ১৩ মার্চ তথ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ডাউনলিংকপূর্বক সম্প্রচারিত সব বিদেশী টিভি চ্যানেলে দেশী পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এ নির্দেশ অমান্য করলে ডিস্ট্রিবিউশন লাইসেন্স বাতিল/ স্থগিত এবং ২৮ ধারা মোতাবেক দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- হতে পারে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এর আগে জারিকৃত এক পরিপত্রে বলা হয়, কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন-২০০৬ এর ধারা ১৯ এর ১৩ নম্বর উপধারায় বিদেশী টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ডাউনলিংকপূর্বক সম্প্রচারিত কোন কোন বিদেশী টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে মর্মে জানা গেছে, যা ওই আইনের পরিপন্থী।
মন্ত্রী বলেন, একটি টিভি চ্যানেল করতে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা লাগে। টিভি মালিকরা সবাই লাভ করার মানসিকতা নিয়ে এসেছেন, তা নয়। তবে এটার মাধ্যমে খরচটা উঠে আসুক এটা সবাই চান। তাই এই শিল্পটাকে বাঁচানোর স্বার্থে সবাই সহযোগিতা করবেন। কেবল অপারেটরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ৩ কোটি টাকা টিভি থেকে রেভিনিউ আসে। কিছুটা শেয়ার হলে টিভি চ্যানেলগুলো টিকে থাকবে এবং সাংবাদিকদের চাকরির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সবার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ এসেছে আইপি টিভি। সেটির কোন লাইসেন্স দেয়া হয়নি। আমি বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি, তারা জানাবে। তিনি বলেন, কেউ ৩০ কোটি টাকা খরচ করে চ্যানেল করবেন আর কেউ ১০ লাখ টাকায় চ্যানেল চালু করে দেবেন, এটা ঠিক না। আমরা এটির অনুমোদন দেব না তা নয়, এর জন্য নীতিমালা প্রয়োজন। আর নীতিমালা প্রণয়নে ইতোমধ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের এই শিল্পটাকে সুরক্ষা দিতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে মুনাফায় একটু ছাড় দিয়ে হলেও সবাইকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।