সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর ব্যবস্থা

53

সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু যেন দেশের মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো প্রতিকার নেই। দুর্ঘটনায় একের পর এক প্রাণহানি ঘটছে, প্রিয়জনের অকালমৃত্যুতে একটি পরিবারে চিরদিনের জন্য শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে—কিন্তু বাস মালিক-শ্রমিকদের কোনো বিকার নেই। বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর পঞ্চম দফায় ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ’ চলছে এখন। এরই মধ্যে জেব্রা ক্রসিংয়ে গত মঙ্গলবার বাবার সামনেই বাসচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন আবরার। সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রবেশের গেটের সামনে প্রগতি সরণিতে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষের এই মেধাবী শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চালক সিরাজুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। আবরারের মৃত্যুর পর বিইউপিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দায়ী বাসচালকের সর্বোচ্চ শাস্তি, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করাসহ আটটি দাবি জানিয়ে দিনভর প্রগতি সরণি অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। বুধবারও সড়ক অবরোধ করে তারা। প্রথম দিনের বিক্ষোভ নর্দ্দায় প্রগতি সরণিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও বুধবার সকাল থেকে তা ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার বিভিন্ন অংশে।
রাজধানী সহ দেশের গণপরিবহনে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সড়ক-মহাসড়ক, এমনকি রাজধানীতেও অবাধে চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। দেখার যেন কেউ নেই, আইন প্রয়োগের কোনো বালাই নেই। সামান্য কয়েকজন বাস মালিক ও শ্রমিকের কাছে কি এই দেশ ও দেশের মানুষ জিম্মি হয়ে আছে? পাবলিক ট্রান্সপোর্টে শৃঙ্খলা ফেরানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগও নেই। ফিটনেসবিহীন বাস রাজপথে চালানোর অভিযোগে বাস মালিকের বিরুদ্ধেও তো মামলা হওয়া উচিত।
রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে বাসচাপায় হত্যার ঘটনায় টানা ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠলে তাদের ৯ দফা দাবি মানার আশ্বাস দেয় সরকার; ঘরে ফেরে শিক্ষার্থীরা। গত প্রায় আট মাসে শিক্ষার্থীদের ৯ দাবির মধ্যে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ জাতীয় সংসদে অনুমোদন হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। সাবেক নৌমন্ত্রী ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন। বাকি দাবিগুলো এখনো প্রক্রিয়াধীন। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হলেও তাদের সমন্বয়হীনতা ও ধারাবাহিক কর্মসূচির অভাবে দাবিগুলোর জোর যেন ফিকে হয়ে গেছে। কেন এমন হয়? কিসের জোরে বাস মালিক ও শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কার্যালয়ের নির্দেশনা অমান্য করার সাহস দেখাতে পারে?
সড়কে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া হোক। লাইসেন্সবিহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।