কমলগঞ্জে নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলার ঘটনায় চা শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা

44

কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
গত ১৮ মার্চ সোমবার ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে এবার বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য রাম ভজন কৈরী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন এলাকায় বেসরকারীভাবে ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিক্ষোভ সমর্থকদের হামলায় আহত হয়েছিলেন ১০ জন চা শ্রমিক সন্তান। এ ঘটনার পর থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ২৩টি চা বাগানে চা শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আবারও হামলার আশংকায় বুধবার (২০ মার্চ) সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ভাতা গ্রহণে উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংক চা শ্রমিকরা আসছিলেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পরে চা শ্রমিকরা সোনালী ব্যাংক কমলগঞ্জ শাখায় এসে তাদের ভাতা গ্রহণ করেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদে প্রথম বারের মত উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সিদ্দেক আলীকে প্রায় ১২ হাজার ২৩৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী। নির্বাচনে রাম ভজন কৈরী টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৩১ হাজার ১২। আর পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান সিদ্দেক আলী তালা প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৭৯টি।
নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী বলেন, নির্বাচন শেষে সব কেন্দ্র থেকে এজেন্টের মাধ্যমে ফলাফল সংগ্রহ করার পরও উপজেলা প্রশাসন চত্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফল মাইকে প্রচার করছিলেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। কেন্দ্র ভিত্তি ফলাফল পেয়ে ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে প্রচারিত ফলাফল শুনতে পেয়ে নিশ্চিত পরাজয় জেনে রাত ৮টায় পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী (তালা)-র বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা পুলিশ ও বিজিবির নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে তালা শ্লোগান দিয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে প্রবেশ করে। বিক্ষুব্ধরা তালার প্রার্থী জয়ী হিসেবে দাবি করে। এ সময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন সহকারী রিটার্নিং অফিসার, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, অন্যান্য প্রার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীরা। পরে সহকারী রিটার্নিং অফিসার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করলে বিজিবি সদস্যরা এসে বিক্ষুব্ধ পরাজিত তালা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বের কেরে দেয়।
রাত সাড়ে ৯টায় বেসরকারীভাবে এ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে চূড়ান্তভাবে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল ঘোষণা করলে সকল প্রার্থী উপজেলা প্রশাসন চত্তর ত্যাগকালে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত প্রার্থী রাম ভজন কৈরীর নিরব সমর্থকদের উপর হামলা চালায় পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা। এ হামলায় আহত হয়েছেন ১০ জন চা শ্রমিক সন্তান। এ ঘটনার পর থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ২৩টি চা বাগানে চা শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি পরবর্তী হামলার আশঙ্কায় চা শ্রমিকরা কমলগঞ্জ উপজেলা সদরে আসছে না।
গতকাল বুধবার সকালে হামলার আশঙ্কায় উপজেলার কয়েকটি চা বাগানের চা শ্রমিকরা আসছিলেন না। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হকের হস্তক্ষেপে ব্যাংক শাখায় পুলিশী নিরাপত্তা দিলে চা শ্রমিকরা এসে ভাতা গ্রহণ করে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির (অঞ্চলের) সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা বলেন, পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান সিদ্দেক আলী আওয়ামীলীগ নেতা। ঘটনাস্থল এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির নিরাপত্তা বাহিনী থাকার পরও এ হামলা হলো কিভাবে ? তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চা শ্রমিক সন্তান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তা তারা মেনে নিতে পারেনি। তাই পরিকল্পিতভাবে প্রথম হামলায় ফলাফল পরিবর্তনের অপচেষ্টা করা হয়েছিল। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সাংবাদিকদের উপস্থিতি থাকায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাই পরে রাম ভজন কৈরীর নিরব সমর্থকদের উপর নোংরা হামলা চালানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগামীতে নির্বাচনে চা জনগোষ্ঠীর বাইরের প্রার্থীকে ভোট প্রদানে তাদরেকে নতুন করে ভাবতে হবে। চা শ্রমিক নেত্রী গীতা রানী কানু বলেন, এ হামলার সুষ্ঠু বিচার না হলেও আমরা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালা প্রতীকের একাধিক লোক বলেন, এ হামলার সঙ্গে তারা কোনোভাবেই জড়িত নয়। তারা নিজেরা (চা শ্রমিক) নিজেদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন উপজেলা প্রশাসন চত্তরে নিয়ন্ত্রণ এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা হয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনী সজাগ থাকায় তেমন কিছু হয়নি। আর ফলাফল ঘোষণা শেষ করে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে ফলাফলপত্র হাতে তুলে দেওয়ার পর যাবার পথে কিছুটা উত্তেজার সৃষ্টি হয়েছিল বলে ওসি জানান। তবে তেমন কিছু হয়নি।
কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ফলাফল ঘোষণাকালে বিক্ষুব্ধরা আকস্মিকভাবে মিছিল দিয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে প্রবেশ করে বিঘœ ঘটিয়েছিল। তবে সব শেষের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন নিরাপত্তার অভাবে বুধবার ব্যাংক থেকে ভাতা গ্রহণে চা শ্রমিকরা আসতে চায়নি। তিনি থানার ওসিকে বলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করায় চা শ্রমিকরা এসে ভাতা গ্রহণ করেছে। তবে নির্বাচনের রাতে সব শেষে চা শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনা তিনি জানেন না বরে জানান। কেউ তাঁর কাছে অভিযোগও করেনি। তারপরও খোঁজ নিয়ে দেখছেন বলে নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক জানান।