প্রাথমিক শিক্ষা হউক আনন্দের সাথে

63

শিক্ষাজীবনের ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। ভিত্তি মজবুত না হলে পরবর্তী জীবনে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শিক্ষাজীবন থেমেও যেতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষা সুন্দর ও সাবলীল করার প্রধান উপায় হচ্ছে শিশুদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা, শিক্ষাকে আনন্দময় করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যেমন আমাদের অভিভাবকদের মধ্যে, তেমন বিদ্যালয়ের পরিবেশে তার অভাবটাই বড় করে দেখা যায়। শিশুদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, ধমক দিয়ে কিংবা শাস্তি দিয়ে তাদের শেখানোর চেষ্টা করা হয়। ফলে শিক্ষাজীবনের শুরুতেই পড়াশোনার প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, এমনকি শিক্ষাকে তারা ভয়ের চোখে দেখতে শুরু করে। এর ফলে তাদের শিক্ষাজীবনের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যায়।
বাস্তবতা হলো, শিশুদের স্কুলে দেওয়ার বয়স হলেই মা-বাবার মধ্যে শিশুকে শেখানোর এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। নামিদামি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করার জন্য একটার পর একটা কোচিং-টিউটরের ব্যবস্থা করা হয়। নিজেরাও পড়াতে বসে যান। শিশুদের টিভি দেখা, খেলাধুলা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পড়াশোনা ক্রমেই তাদের কাছে বিরক্তি ও ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে। পড়াশোনার প্রতি কোনো আগ্রহই থাকে না। বাধ্য হয়ে তোতাপাখির মতো কিছু বুলি শেখে। এটি যে শিশুটির শিক্ষাজীবনকে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তা আমরা প্রায়ই ভেবে দেখি না। শিশু শিক্ষাকে আনন্দময় করার জন্য আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে যে ধরনের আয়োজন থাকা প্রয়োজন, তার অভাবও বড় বেশি স্পষ্ট। বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলাধুলার কোনো ব্যবস্থা নেই। ক্রীড়া সরঞ্জামও নেই। কিছু বিদ্যালয়ে তা থাকলেও সেগুলো শিশুদের কাছে পৌঁছে না, আলমারিতে তালাবদ্ধ থাকে। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোতে মাঠের কোনো অস্তিত্ব নেই। অডিও-ভিডিও মাধ্যমে শেখানোর সুযোগও অত্যন্ত সীমিত। বই মুখস্থ করানোই যেন বিদ্যাশিক্ষার একমাত্র উপায়। এটি শুধু ক্ষতিকর নয়, ধ্বংসাত্মকও বটে। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।