৮৩ উপজেলায় কাল ভোট

65
৮৩ উপজেলায় কাল ভোট

কাজিরবাজার ডেস্ক :
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে কাল। এই দফায় সারাদেশের ৮৩ উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে। রবিবার ৮৩ উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট নেয়া হলেও ইতোমধ্যে ১৬ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও ছয় উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা এবং ৭ উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর বাইরে রাজশাহীর পবা উপজেলায় আদালতের আদেশে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে আগামীকাল বাকি ৮৩ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ২১৬ জন। ৪০৬ ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২৭৩ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচনের জন্য কমিশনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীদের প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে। নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে।
প্রথম দফায় উপজেলায় নির্বাচনের জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসির অনুযায়ী গত ১১ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান এবং দুটি ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট করতে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দিনে চেয়ারম্যান পদে মোট ১৬ ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন নির্বাচিত হওয়ায় এসব এলাকায় সংশ্লিষ্ট পদটিতে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন নেই। ইসি সূত্রে জানা তিনটি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সবাই নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা তিনটির মধ্যে রয়েছে জামালপুরের মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ এবং নাটোরের সদর। ফলে এই তিন উপজেলায় কোন পদেই ভোটগ্রহণ করতে হচ্ছে না।
এদিকে উপজেলার প্রথম দফায় সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকছে রবিবার। ওইদিন নির্বাচনী এলাকায় (সংশ্লিষ্ট উপজেলায়) অবস্থিত তফসিলী ব্যাংকসমূহের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ সকল শাখা বন্ধ থাকবে। এদিকে প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলায় কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটার সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে। আজ রাতের মধ্যে তা নির্বাচনী কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে। তবে প্রথম ধাপে কোন উপজেলায় ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে না। ব্যালট পেপারেই ভোটগ্রহণ করা হবে।
প্রথম ধাপে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটের পরেও এসব বাহিনীর সদস্যরা দুইদিন মাঠে থাকবেন। নির্বাচনকে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করতে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের দেয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। ভোটে অনিয়ম হলে দায় দায়িত্ব তাদেরকেই বহন করতে হবে বলে ইসির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনী এলাকায় ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সব ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোটের ৭ দিন আগে থেকে বৈধ অস্ত্র লাইসেন্সধারীদের অস্ত্র বহন, প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপজেলায় নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশ থাকবে। এর মধ্যে সাধারণ কেন্দ্রে মোতায়েন থাকছে ১৪ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ জন করে এবং বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য, হাওর ও দ্বীপ) সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনকে সব ধরনের প্রভাবমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ডিসি-এসপিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে উপজেলা নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করে যে মাঠ প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সেই জায়গাটা সমুন্নত রাখতে মাঠ প্রশাসনের সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে নির্বাচনের সময় সব প্রার্থীরা সমান সুযোগে ভোট করতে পারে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোটদান শেষে নিরাপত্তহীনতায় না থাককেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাজিনীর সদস্যদের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
নির্বচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত নিরপেক্ষভাবে প্রার্থীর প্রচার, আচরণ পর্যবেক্ষণ করবেন। যথযথভাবে আচরণবিধি প্রতিপালনে সবাইকে পরামর্শ দেবেন। যারা আচরণবিধি ভঙ্গ করবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বা পরিবেশ বিনষ্টকারী যে কোন কর্মকান্ড বা কোন ধরনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছেন উল্লেখ করা হয়েছে।