পর্যটনে দেশকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর চার মহাপরিকল্পনা ॥ ২২ সালে কক্সবাজার যাবে হাইস্পীড ট্রেন

67

কাজিরবাজার ডেস্ক :
পাহাড়, সমুদ্র আর সবুজে ঘেরা সোনার বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের মধ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার যাবে হাইস্পীড ট্রেন। বৃহস্পতিবার রাতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ কাজ পরিদর্শন থেকে ফিরে সিআরবির অফিসার্স রেস্ট হাউসে সাংবাদিকদের এ তথ্য প্রকাশ করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি আরও বলেন, রেলের উন্নয়নে সরকার একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। পর্যটনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চট্টগ্রামে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন রেলের পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ফারুক আহমেদ। চউক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন উন্নয়নের গতিপথে পতেঙ্গাকে টার্নিং পয়েন্ট বানাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। ফলে পতেঙ্গায় বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রবেশদ্বার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেষসীমা, পতেঙ্গায় বিশ্বপর্যটনের আদলে পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়েসহ রিংরোড প্রকল্প ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইনসহ চার মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে এই সরকারের আমলে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে গড়া বিশাল মঞ্চে আয়োজিত সুধী সমাবেশে উন্নয়ন পরিকল্পনার বক্তব্যে বলেন, আমি কাজ করতে চাই দেশের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের চিন্তা করি ২০১০ সালে। ২০১৪ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হলে শতভাগ সহায়তার আশ্বাস পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় টানেল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে, পতেঙ্গা টানিং পয়েন্টের নেপথ্যে রয়েছে পর্যটনের উদ্দেশে যারা ভারতের দার্জিলিং, থাইল্যান্ডের পাতায়া আর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অহরহ যাতায়াত করছেন তাদের বিদেশ বিমুখ করা। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে। এ দুটি সমুদ্র সৈকতকে পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে রূপায়িত করতে সরকারের উন্নয়ন মহাযজ্ঞ চলমান রয়েছে। লালখান বাজার থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত , পতেঙ্গা টার্নিং পয়েন্ট থেকে আনোয়ারা টানেল আর আনোয়ারা থেকে পটিয়া হয়ে কক্সবাজারে চারলেনের রাস্তা। ২০২২ সালের মধ্যে পর্যটনে শতভাগ এগিয়ে যাবে এমন ধারণা চউক চেয়ারম্যান আবদুস সালামের।
২০২২ সালে চট্টগ্রামের টার্নিং পয়েন্ট হবে পতেঙ্গা। এ টার্নিং পয়েন্ট গড়ে উঠার পেছনে রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার দুটি ও বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটি (বিবিএ) এর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প।
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের নক্সা অনুযায়ী দেখা গেছে, প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭ মিটার। টানেলের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের বাইরে পতেঙ্গা এলাকায় কাটা হবে ২০০ মিটার আর আনোয়ারায় কাটা হবে ১৯০ মিটার। কার্যপরিধি ২৫ মিটার। আনোয়ারা অংশে ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ৬৩৭ মিটার। মোট ৫ বছর সময়ের মধ্যে মাত্র এক বছর অতিক্রান্ত হল। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এই টানেলের কাজ শেষ হবে বলে সেতু বিভাগের কয়েক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ১২ মিটার বৃত্তাকার এই টানেল আচ্ছাদিত অংশ পতেঙ্গা অংশে ১৯৫ মিটার আর আনোয়ারা অংশে ২৩০ মিটার। ৪ লেন বিশিষ্ট এপ্রোচ সড়কের মধ্যে রয়েছে পতেঙ্গা অংশে ৫৫০ মিটার আর আনোয়ারা অংশে ৪ হাজার ৮০০ মিটার।
এই দুটি টিউব চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ এর এ্যালাইনমেন্ট হবে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে। টানেলের প্রবেশপথ হবে নেভি কলেজের কাছে, বহির্গমন পথ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানা সংলগ্ন ঘাট। প্রকল্প সাইটের উভয়দিকে বগুড়ার আরডিএ কর্তৃক চারটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে প্রকল্পের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য। এছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উভয়দিকে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে। আবার পতেঙ্গা প্রান্তে ১৫ মেগাওয়াট স্থায়ী বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে। এজন্য আনোয়ারা প্রান্তে বিদ্যুত সাবস্টেশন নির্মাণ করছে।
বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটির পক্ষ থেকে আরও জানা গেছে, টানেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে চট্টগ্রামের চিত্র। গড়ে উঠবে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ, আধুনিয়কায়ন হবে বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, সংযোগ স্থাপন হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে, যুক্ত করা হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে, তরান্বিত হবে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ, বৃদ্ধি পাবে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা ও সুযোগ-সুবিধা, গতি পাবে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ, নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে।