মানসম্মত শিক্ষা

83

‘সবার জন্য শিক্ষা’ এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। প্রতিবছর প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ। বৃত্তি ও উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তার পরও শিক্ষাক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে বলে মনে হয় না, বিশেষ করে শিক্ষার মান নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে যে চিত্রটি উঠে এসেছে, তা সুখকর নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্লাসে যা শেখানো হচ্ছে, তাতে অন্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে থাকছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শিশুরা ১১ বছরে যা শেখে, অন্য দেশে সাড়ে ছয় বছরেই তা শিখছে শিশুরা। অর্থাৎ বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থীকে অন্য দেশের শিক্ষার্থীদের তুলনায় একই বিষয়ে শিখতে সাড়ে চার বছর বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় সামগ্রিক ব্যয় কম। স্কুলব্যবস্থার মানও দুর্বল। শুধু প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক নয়, উচ্চশিক্ষার দুর্বল চিত্রও উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে। বিশ্বব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৮ : লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষা নিয়ে হাতাশা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে যে বাজেট, এর ১ শতাংশও গবেষণায় ব্যয় হয় না। আবার শিক্ষার মান মূল্যায়নের কোনো ব্যবস্থাও নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছরের প্রথম দিন থেকে শুরু হচ্ছে শিক্ষাপঞ্জি। শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে তুলে দেওয়া হচ্ছে নতুন বই; কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তৃতীয় শ্রেণির ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা বিষয়টিও সঠিকভাবে পড়তে পারে না। আর পঞ্চম শ্রেণির মাত্র ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সঠিকভাবে গণিত বোঝে। অর্থাৎ ৭৫ শতাংশই বোঝে না। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যে অবকাঠামো থাকা দরকার, তা নেই। আবার প্রাক-শৈশবে শিশুদের ঠিকমতো উন্নয়ন হচ্ছে না। দুর্বল শিক্ষাদান পদ্ধতি ও বিদ্যালয় পরিচালনা ব্যবস্থায় দুর্বলতা এর জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় সামগ্রিক ব্যয় কম।
মানতে হবে দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার মতো যোগ্য শিক্ষকের ঘাটতি আছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ যেভাবে হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। আবার শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ থাকা উচিত, তা-ও নেই। ফলে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না মানসম্মত শিক্ষা। এ বিষয়ে এখন থেকেই দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। শৈশব থেকেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই আমরা একটি শিক্ষিত প্রজন্ম পেয়ে যাব, যাদের হাতে রচিত হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।