গ্রামীণ প্রকল্প বাস্তবায়নে কঠোর হোন

65

জনকল্যাণে সরকার নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা করে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রতিবছর শত শত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বছর শেষে দেখা যায় এডিপি বাস্তবায়নের হার গড়ে ৫০ শতাংশেরও নিচে থেকে যায়। এ নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায় না। সাধারণভাবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকেন আমলা বা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। বলা হয়ে থাকে যে আমাদের আমলাদের একটি বড় অংশই এখনো মধ্যযুগীয় মনমানসিকতার বাইরে আসতে পারেননি। সেই পরিস্থিতিরই কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সিলেট সফরের সময়। ২০১৫ কিংবা ২০১৬ সালে গৃহীত কোনো কোনো প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় শূন্য। জমি অধিগ্রহণই হয়নি অনেক প্রকল্পে। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) দামি গাড়িসহ প্রচুর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ঢাকায় বা অন্য কোনো বড় শহরে রাজার হালে জীবন কাটান, ঘুরে বেড়ান, কিন্তু প্রকল্প এলাকায় যান না বললেই চলে। সিলেট বিভাগের চার জেলার ৫৮টি প্রকল্পের পরিচালকদের নিয়ে আয়োজিত পর্যালোচনা সভায় অনেক পরিচালক উপস্থিত হননি বলেও জানা গেছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ মন্ত্রী প্রকাশ্যেই সাংবাদিকদের কাছে তাঁর ক্ষোভের কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে সবকিছুই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন। তিনিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নের এই দুর্গতি নতুন নয়। বাস্তবায়নের ধীরগতি বা অহেতুক বিলম্বের জন্য প্রায়ই প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে দিতে হতো বাজারমূল্যের দেড় গুণ। আইন পরিবর্তন হওয়ায় এখন দিতে হবে তিন গুণ। প্রয়োজনীয় উপাদানের দামও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। শেষ পর্যন্ত অনেক প্রকল্পই মাঝপথে ঝুলে থাকে বা বাতিল করতে হয়। এসব কারণে অতীতে বিদেশি অর্থায়নের অনেক প্রকল্প থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দেওয়া অর্থ ফেরতও নেওয়া হয়েছে। তার পরও আমাদের আমলা বা পিডিদের একাংশের মধ্যে কোনো হুঁশই হয় না। জানা যায়, ২০১৫ সালে নেওয়া সিলেট বিভাগের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৮৭ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। মন্ত্রীর কাছে ওই পিডি স্বীকারও করেছেন, বরাবর তিনি ঢাকায়ই থাকেন। মন্ত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, জনগণের অর্থে কেনা দামি গাড়িটি আপনাকে দেওয়া হয়েছে দুর্গম এলাকায় প্রকল্পের কাজকর্ম দেখার জন্য, ঢাকায় গুলশান-বনানীতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই, তবু ধারণা করা যায়, সে সময় এই আমলা নিশ্চয়ই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাতে লাভ কী? কাণ্ডজ্ঞানহীন এসব প্রকল্প পরিচালকের তাতে কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। কারণ তাঁরা কখনো ভাবেন না যে গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন না হওয়ায় প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আমরা মনে করি, জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারকে এসব ক্ষেত্রে আরো কঠোর হতে হবে। যেসব কর্মকর্তা উন্নয়নের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারবেন না, তাঁদের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে না রাখাই ভালো হবে।