দুর্নীতি প্রতিরোধ হোক

57

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অফিসে গিয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। আরো বড় ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছে দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া এই প্রতারকচক্রের দুই সদস্য। তাদের কাজের কৌশলটিও ছিল অভিনব। সরকারি অফিসে গিয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কোনো সময় ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে, কখনো মোবাইল ফোনে কথা বলে অর্থ আদায় করা হতো। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার পর এমনিতেই দুর্নীতিবাজদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে দুর্নীতিবাজরা মানসিকভাবে সব সময় দুর্বল থাকে। কাজেই দুদকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কেউ কাউকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়ার প্রস্তাব দিলে সে প্রস্তাব লোভনীয় মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই সুযোগই কাজে লাগিয়েছে প্রতারকচক্র। নিজেদের দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সরকারি চাকুরেদের কাছ থেকে গত পাঁচ বছরে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এই চক্রের প্রধান হোতা আনিসুর রহমান বাবুলকে আটক করার পর যে কাহিনি বেরিয়ে এসেছে, তা অবাক হওয়ার মতো। হাজারীবাগের একটি স্যাঁতসেঁতে বাড়িকে দুদক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ওই এলাকার একটি বিকাশের দোকানও ব্যবহৃত হতো কার্যালয় হিসেবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাঠানো ঘুষের টাকা সেখানে গ্রহণ করা হতো। বিভিন্ন জনের নামে মোবাইল ফোনের সিম সংগ্রহ করে বিকাশ হিসাব খোলা হতো। ঘুষ আদায়ের কাজে ব্যবহার করা হতো ২১টি মোবাইল ফোন, ১৭টি সিম কার্ড ও একটি সরকারি টেলিফোন ইনডেক্স। র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর সব অপকর্মের কথা স্বীকার করেছেন আনিসুর রহমান বাবুল। কাদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল, তা-ও জেনেছে র‌্যাব। সব মিলিয়ে প্রতারকচক্রের সব তথ্যই এখন র‌্যাবের হাতে।
প্রাপ্ত তথ্য কাজে লাগিয়ে র‌্যাব বড় ধরনের তদন্ত শুরু করতে পারে। আনিসুর রহমান বাবুলের সঙ্গে কোন কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগাযোগ ছিল, সে তথ্য যখন হাতে এসেছে তখন তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হতে পারে। দুুদকও ওই তালিকা সংগ্রহ করে তাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার করতে পারে। দুর্নীতি আমাদের দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। দুর্নীতি দূর করতে না পারলে সব অর্জনই ব্যর্থ হয়ে যাবে। কাজেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দুদকের নাম করে প্রতারকচক্রের দুই সদস্য যখন র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছে তখন অন্যদের খুঁজে পাওয়া খুব কষ্টকর হবে বলে মনে হয় না। শুধু প্রতারকচক্র নয়, যে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এই চক্র যোগাযোগ করেছে বা তাদের যাঁরা অর্থ দিয়েছেন, সবাইকে তদন্তের আওতায় আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা থাকলে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা অসম্ভব হবে না বলে আমরা মনে করি।