বৈধতা পাচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন ॥ চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি করছে বিআরটিএ

316

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশজুড়ে অবৈধভাবে চলা বিদ্যুৎ চালিত যানবাহনগুলোকে একটি নিয়মের মধ্যে এনে বৈধতা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তাতে বলা হয়েছে, ইলেক্ট্রিক মোটরযান চালাতে হলে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে; থাকতে হবে ফিটনেস সনদ, ট্যাক্স টোকেন। দেশে বিদ্যুৎ চালিত যানবাহনের সংখ্যা কত? এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। বেসরকারী বিভিন্ন সংগঠনের তথ্য হলো ইজিবাইকের সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। ব্যাটারিচালিত রিক্সাসহ নতুন নতুন মডেলের আরও কিছু ব্যাটারিচালিত পরিবহন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈধতা পেলে প্রতিদিন প্রয়োজন হবে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে চার্জিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টাকার বিনিময়ে এসব স্টেশনে বিদ্যুৎ চালিত পরিবহন চার্জ দেয়া যাবে।
বিদ্যুত সঙ্কটের মুখে সরকার এক সময় ইজিবাইক আমদানি নিষিদ্ধ করে। তবুও ব্যবসা বন্ধ থাকেনি। বিদেশ থেকে পার্টস আমদানি করে দেশে গাড়ি বানিয়ে বিক্রি হচ্ছে দেদার। ঢাকাসহ দেশের প্রতি আনাকে-কানাচে এখন ইজিবাইকের দাপট। অনুমোদনহীন এই যানটির চাহিদা যেমন রয়েছে তেমনি সব মানুষের কাছে সহজেই জনপ্রিয় হয়েছে। ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলে এই পরিবহনটি দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে, সত্য। তবে নিষিদ্ধ হওয়া সত্যেও মহাসড়কে চলে! ফলে সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। অনেক আগে থেকেই ইজিবাইক বৈধতা দেয়ার দাবি ওঠে। ৪৫ লাখের বেশি মানুষ এখন এই সেক্টরের সঙ্গে এখন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএর নতুন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ইজিবাইকেরও বৈধতা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেছেন, ইজিবাইক নিবন্ধনের আগে বুয়েটে পরীক্ষা করিয়ে নেয়া হবে। গত বছরের ২৬ নবেম্বর ‘ইলেক্ট্রিক মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৮’ এর খসড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে পাঠায় বিআরটিএ। পরে গত ৬ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে একটি পর্যালোচনা সভা হয়। ওই সভায় বিভাগের সচিব মতামত দেন, নীতিমালার খসড়ায় যেসব বিষয় বলা হয়েছে তার বেশিরভাগই বর্তমান মোটরযান আইন ও বিধিতে আছে। এছাড়া ১৯৮৩ সালের মোটরযান আইন অনুযায়ী ইলেক্ট্র্রিক বা বিদ্যুতচালিত মোটরযান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, এ কারণে নতুন নীতিমালা তৈরির প্রয়োজন নেই।
বিআরটিএর সাবেক সচিব শওকত আলী জানান, নতুন করে নীতিমালা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। অন্য দেশেও বিদ্যুৎ চালিত পরিবহন নিবন্ধন পায়। তাছাড়া আমাদের দেশের সবখানেই এখন এসব পরিবহন ছড়িয়ে গেছে। চলাচলের সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে বৈধতা নিশ্চিত না করলে সড়ক দুর্ঘটনা আরও বেড়ে যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিদ্যুতচালিত মোটরযান কীভাবে নিবন্ধন হচ্ছে, কীভাবে চলাচল করছে, তা দেখতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। এরপর বিআরটিএ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী।
তিনি বলেন, আমরা একটি খসড়া নীতিমালা পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি নীতিমালা আকারে না করে অফিস অর্ডার করে দেবে। নীতিমালা করবে না। মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে একটি প্রস্তাব পাঠাতে। এটি আমরা এখনও দেইনি। প্রস্তাব তৈরির কাজ চলমান। ইজিবাইকও এর আওতায় আসবে কি না- এই প্রশ্নে বিআরটিএর এই পরিচালক বলেন, নীতিমালায় পড়লে এ ধরনের যানবাহনও নিবন্ধন পাবে। তবে এজন্য আগে বুয়েট থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আমরা এগুলো বুয়েটে পরীক্ষা করব। পরীক্ষা করে যদি মনে করি তা নিরাপদ, তাহলে আমরা রেজিস্ট্রেশন দেব।
বিষয়টি নিয়ে এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে বলে জানান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, নীতিমালাটি কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। যানবাহনগুলো চলতে গেলে একটা রেগুলেশন লাগবে। বর্তমান যে বিধি বা আইন আছে, এগুলোর সঙ্গে এটার লাইনআপ করতে হবে। বিভিন্ন আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হবে, কেবিনেটের অনুমোদন লাগবে।