মোনাজাত ও ইমামতি নিয়ে তাবলিগ জামাতের মুরব্বিরা ফের আলোচনায় বসবেন

48

কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তবলীগ জামাতের মধ্যে যে বিভেদ ছিল তা ইতোমধ্যেই মিটে গেছে। এজতেমার প্রস্তুতি চলছে। রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব এজতেমা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সার্বিক নিরাপত্তা, এজতেমায় আগত বিদেশী মেহমানদের ভিসার ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, তবলীগ জামাতের নেতৃত্বের মধ্যে যে বিরোধ চলে আসছিল সেটার মীমাংসা হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে ১৫, ১৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি এজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। মীমাংসার পর প্রস্তুতিমূলক সভা করতে এত সময় কেন লাগল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাঠে কে ইমামতি করবেন, কে নেতৃত্ব দেবেন, সেসব খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দু’পক্ষ মিলে যাতে সুন্দরভাবে এজতেমা শেষ করা যায়, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সারা পৃথিবীতেই তবলীগ জামাতের মধ্যে এখন দ্বিমত রয়েছে। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। তবে এজতেমার শেষদিনে কে মোনাজাত পরিচালনা করবেন কিংবা নামাজে কে ইমামতি করবেন ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে ফের ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বিবদমান দু’পক্ষের দু’জন করে চারজন মুরুব্বি বৈঠকে বসবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের মেয়র, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে মাঠ তৈরিসহ সামগ্রিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।
বৈঠক শেষে ধর্মমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যে যা-ই বলি আমাদের সবার কথাই এক। সেটা হলো, তবলীগ জামাতের দুটি পক্ষ আছে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর একসঙ্গে এজতেমাটা হবে- এ সিদ্ধান্ত তারাই নিয়েছেন। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা-গোলযোগ ছাড়া যাতে এজতেমা শেষ হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। আজকের বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারপরও এজতেমা পরিচালনায় খুঁটিনাটি কিছু বিষয় থেকে যায়। যেমন- কে এজতেমার নেতৃত্ব দেবেন, কে ইমামতি করবেন, কে মোনাজাত করাবেন- এসব বিষয়ে দু’পক্ষ বসে আলোচনা করবেন। আমরা দু’পক্ষকে দায়িত্ব দিয়েছি, তারা বসে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি আলেমরা সাদবিরোধী ও সাদপন্থী দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এক গ্রুপে রয়েছেন তবলীগের মূলধারার সাদ কান্ধলভিপন্থী বাংলাদেশে তবলীগের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। অপর গ্রুপে রয়েছেন মাওলানা সাদবিরোধী পাকিস্তান পন্থী বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। এ বিভক্তি চরম রূপ ধারণ করে গতবছরের জানুয়ারিতে বিশ্ব এজতেমার সময় মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসার পর। বিরোধীদের বাধার মুখে এজতেমায় অংশ না নিয়েই মাওলানা সাদকে ওই সময় বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল। গত ১ ডিসেম্বর এজতেমা মাঠে দু’পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় সম্মেলন ‘বিশ্ব এজতেমা’র আয়োজনও করে আসছিল তবলীগ জামাত। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে অঞ্চলভেদে দুই পর্বে এটি হয়। কিন্তু এবার দু’পক্ষ চলতি মাসে আলাদাভাবে এজতেমার তারিখ ঘোষণা করে। নির্বাচনের আগে সরকার দু’পক্ষের সঙ্গে সভা করে এজতেমা স্থগিত করে। সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, নির্বাচন শেষে দু’পক্ষের সঙ্গে বসে অভিন্ন এজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হবে। বিবদমান দু’পক্ষের রেষারেষিতে বিষয়টি সুরাহ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত এ-সংক্রান্ত রিট খারিজও করেন। দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিশৃঙ্খলা প্রশমিত করার উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরে সব পর্যায়ের সবাইকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে দু’গ্রুপ একসঙ্গে বসে এক পর্বে বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠিত হবে মর্মে ঘোষণা দেয়। ওইদিন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, দ্বন্দ্ব নিরসনের পর তবলীগ জামাতের দু’পক্ষ মিলে ১৫-১৭ ফেব্রুয়ারি এজতেমা আয়োজন করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে সময় তিনি আরও বলেন, দু’পক্ষ দুটি ডেট ঠিক করছিলেন। একদল বলেছিল ৮ তারিখ (৮, ৯, ১০ ফেব্রুয়ারি), আরেক দল বলেছিল ২২ (২২, ২৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি)। তখন মীমাংসার পথ হিসেবে আমরা প্রপোজ করেছি, এমন না হয় একপক্ষ বলবে ওনাদের কথামতো তারিখটা ঠিক হলো। আমরা দু’টার মাঝামঝি একটা তারিখ রাখলাম ১৫, ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি। ওই তিনদিন একসঙ্গে টঙ্গীর ময়দানে অন্যান্য বছরের মতো বিশ্ব এজতেমা সুন্দরভাবে পালিত হবে। এ বৈঠকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।