উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ॥ কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা পন্ড, ২ জন বহিষ্কার

77
বহিষ্কৃত ২ জন।

স্টাফ রিপোর্টার :
ব্যাপক হট্টগোল ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে পন্ড হয়েছে কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ হল রুমে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই বর্ধিত সভার আয়োজন করেছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ। এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলি কালা মিয়ার পরিচালনায় বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওমীলীগ নেতা মুহাম্মদ আলি দুলাল, এডভোকেট মাহফুজুর রহমান, জগলূ চৌধুরী, আজমল আলি, নুরুল আমিন, সাদ উদ্দিন।
জানা গেছে- মঙ্গলবার বেলা ২টায় সভা শুরু হলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে দলীয় প্রার্থী আহবান করা হয়। এতে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থীর নাম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১ জনের নাম জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে প্রস্তাব করা হয়।
এ সময় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক নাসরিন জাহান ফাতেমাকে মনোনয়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বর্ধিত সভায় উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্য ও ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কোন প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সে ব্যাপারে জেলা নেতৃবৃন্দ দলীয় নেতা কর্মীর মতামত চান। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রের নির্দেশনার আলোকে প্রকাশ্যে মতামতের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ের আহবান জানান।
কিন্তু চেয়ারম্যান প্রার্থী শামিম আহমদ প্রক্যাশে মতামতের পরিবর্তে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ের দাবী করেন। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আপ্তাব আলি কালা মিয়া ও জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ্যে মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাইয়ের মতামত ব্যক্ত করেন। এসময় জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ গোপন ব্যালটে ভোট নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুপক্ষে উত্তেজনা ও হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় আপ্তাব আলি কালা মিয়া ও জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারী নেতাকর্মীরা চেয়ার ভাংচুর করে শামিম আহমদের উপর চড়াও হলে জেলা নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তখন উত্তেজিত নেতাকর্মীরা শামিম আহমদের উপর ফের চড়াও হলে পুলিশ বেষ্টনিতে জেলা নেতৃবৃন্দ শামিমকে নিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণে গোপন ভোটের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালার নেতৃত্বে চেয়ার ভাংচুর ও ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। তখন সভাস্থলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী হামলার ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, সভা সুন্দরভাবে চলছিল। যখন মতামত চাওয়া হয় তখনই আপ্তাব আলী কালা ও জাহাঙ্গীর আলমের লোকজনের মধ্যে হট্টগোল শুরু হলে ব্যাপক চেয়ার ভাংচুর ও চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম হামলার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে পুলিশ সঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না হলে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারতো। হামলার সময় বেশ কিছু চেয়ার ভাংচুর ও ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। তবে সেখানে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, দলীয় শৃঙখলা ভঙ্গ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সভাপন্ড করার দায়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা মিয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাদের বহিষ্কার করা হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তাদের কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবেনা, এ ব্যাপারে কারণ দর্শানোর নোটিশও প্রদান করা হবে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় তারা উভয়েই দাঙ্গা-হাঙ্গামা করেন। তাদের কারণে সভায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় এবং একসময় পন্ড হয়ে যায়। বহিষ্কারের আদেশের কপি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবরেও পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।