চিকিৎসাসেবায় নিয়ম

47

পুনরায় ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলোর অন্যতম হচ্ছে জনগণের দোরগোড়ায় উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় তা কতটুকু সম্ভব হবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। দেশের বেশির ভাগ মানুষের বসবাস গ্রামাঞ্চলে। অতীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গ্রামাঞ্চলের অধিক মানুষকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলে। চিকিৎসকও নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা সেখানে যান না বললেই চলে। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন। বাকিদেরও অনেকে হাসপাতালে এসে সই করেই চলে যান। সরকারের বিনা মূল্যে বিতরণের ওষুধ রোগীরা পায় না। হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স, রোগনির্ণয় যন্ত্র বা চিকিৎসা সরঞ্জাম অকেজো হয়ে থাকে। ইচ্ছাকৃতভাবে অকেজো করে রাখার অভিযোগও কম নয়। হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য যে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি স্থাপন করা হয়, কয়েক দিনের মধ্যেই তা নষ্ট হয়ে যায় বা নষ্ট করে দেওয়া হয়। গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে যাঁরা সেবা দেবেন, তাঁদের মানসিকতা যদি এমন হয়, তাহলে সরকারের সদিচ্ছার বাস্তবায়ন হবে কিভাবে?
জনকল্যাণে গৃহীত সরকারের এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের দায়িত্ব মাঠ প্রশাসনের। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে যতটুকু জানা যায়, স্বাস্থ্য প্রশাসনের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সর্বত্রই রীতিমতো পচন ধরেছে। দুদকের কিছু পদক্ষেপে এরই মধ্যে তার কিছু প্রমাণও জনসমক্ষে উঠে এসেছে। এই প্রশাসনের পক্ষে জেলা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কতটুকু সম্ভব? চিকিৎসাসেবা একটি মহৎ পেশা। এ জন্য চিকিৎসকদের আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিতপ্রাণ থাকার শপথ নিতে হয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখছি। তাঁরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন, কমিশনের নামে নানাভাবে দরিদ্র রোগীদের পকেট কাটছেন। নৈতিকতার এই অধঃপতন কি শপথের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? ব্যক্তিগত ত্রুটি ঢাকার জন্য মানুষ অনেক অজুহাতের আশ্রয় নেয়। চিকিৎসকরাও অতীতে অনেক অজুহাত দেখিয়েছেন। মফস্বলে থাকার ব্যবস্থা নেই, লাইব্রেরি নেই, সময় কাটানো যায় না আরো কত কি? গত এক দশকে থাকার ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে। আরো উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রতিটি উপজেলা সদর এখন অনেক উন্নত। এমনিতেও অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এখন এসব অজুহাত খাটে না। তা ছাড়া যেসব চিকিৎসক এসব হাসপাতালে চাকরি নেন, তাঁরা সেখানে কী সুবিধা আছে, না আছে, তা জেনেই চাকরি নেন। চাকরি নেওয়ার পর দায়িত্ব পালন না করা অন্যায়। গত রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, সরকারি যেসব চিকিৎসক ও নার্স রোগীর সেবাসহ নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করবেন না, তাঁদের চাকরি থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত।
চিকিৎসকদের হাসপাতালে উপস্থিতি এবং রোগীদের যথাযথভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে কি না, তা কঠোর নজরদারির আওতায় আনা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরো তৎপর হতে হবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে চিকিৎসকদেরও মানসিকতা বদলাতে হবে।