মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ॥ দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অপেক্ষাকৃত তরুণ মন্ত্রীদের নতুন উদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন নতুন উদ্ভাবনীর মাধ্যমে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। দুর্নীতি কোন অবস্থায় বরদাস্ত করা হবে না। কাজের মধ্যে সততা থাকতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। যে সকল কাজ করা হবে তা প্রচার করতে হবে। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এই কথা বলেন। এছাড়া মন্ত্রিসভা রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী জাহাজের সুরক্ষায় নতুন একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। এতে জাহাজে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নের আদলে ‘শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’ গঠনে শ্রমিকদের সমর্থনের হার ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাবের অধ্যাদেশ আইন হিসেবে সংসদে উত্থাপনের অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগেও বলেছি, আবারও বলছি, দুর্নীতি কোন অবস্থায় বরদাস্ত করা হবে না। সকলে সতর্ক থাকবেন। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতিকে মদদ দেয়াও অপরাধ। কোন দুর্নীতিবাজকে কেউ যদি বাঁচানোর চেষ্টা করে তা হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেই হোক দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতেই হবে।
তিনি বলেন, কাজের মধ্যে সততা থাকতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে আমরা উন্নত একটি দেশ উপহার দিতে চাই। আপনারা কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। এই সুযোগ কাজে লাগান। নতুন নতুন উদ্ভাবনীর মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবেন আশাকরি। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মন্ত্রিসভায় অধিকাংশই তরুণ, বয়স কম। নতুন উদ্যমে কাজ করতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। জনগণের স্বার্থ দেখে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, অতীতেও মন্ত্রণালয়গুলো অনেক ভাল কাজ করেছে। ভাল কাজ করেছে বিধায় দেশ উন্নয়নশীল হয়েছে। এবার তরুণ মন্ত্রীরা আরও বেশি উদ্যমে কাজ করে দেশকে আরও উন্নত দেশে পরিণত করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
এদিকে মন্ত্রিসভা ‘বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ (সুরক্ষা) আইন, ২০১৯’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সমুদ্রপথে পরিবাহিত পণ্যের ৪০ শতাংশ পতাকাবাহী জাহাজে পরিবহনের বিধান ছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ‘মার্শাল ল’ আমলের আইনকে বাংলায় রূপান্তর করে নতুন করে করা হচ্ছে। নতুন আইনে সমুদ্রপথে পরিবাহিত পণ্যের ৫০ শতাংশ পতাকাবাহী জাহাজে পরিবহনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন যেসব জাহাজ পরিচালনা করে সেগুলোতে বাংলাদেশের পতাকা থাকায় এগুলোকে পতাকাবাহী জাহাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশের ৫০টির মতো পতাকাবাহী জাহাজ রয়েছে। সমুদ্রপথে ৫০ শতাংশ পণ্য বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজে পরিবহনের বিধানটি বাধ্যতামূলক নয় জানিয়ে সচিব শফিউল আলম বলেন, যদি পরিবহন করতে না পারে তবে ওয়েবার দেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে মূলত সরকারী কর্পোরেশনকে প্রোমোট করা হবে।
কোন জাহাজ এই আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করলে ওই জাহাজ কর্তৃপক্ষকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। অধ্যাদেশে জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করা ছিল না।
রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নের আদলে ‘শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’ গঠনে শ্রমিকদের সমর্থনের হার ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাবে গত ৩ ডিসেম্বর সায় দেয় মন্ত্রিসভা। ওই সময় সংসদ অধিবেশন বহাল না থাকায় ‘বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৯’ গত ১৫ জানুয়ারি অধ্যাদেশ আকারে জারি করে সরকার। ওই অধ্যাদেশকে বিল আকারে সংসদে তুলতে সোমবারের মন্ত্রিসভায় তোলা হলে তা অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার কমেছে ॥ গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার তার আগের বছরের একই সময়ের থেকে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে ২০১৭ ও ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হারের তুলনামূলক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে নয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠকে ৮৩টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৬টির, ২৭টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে আটটি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সময়ে সিদ্ধান্ত হয় ৬৮টি, যার মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ৫৩টি। আর ১৫টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন। বাস্তবায়নের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
শফিউল জানান, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঁচটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং সাতটি নীতি বা কর্মকৌশল অনুমোদিত হয়েছে। আর সংসদে পাস হয়েছে ১৯টি আইন। আর ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রিসভা বৈঠকে আটটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি নীতি বা কর্মকৌশল অনুমোদিত হয়েছিল। ওই সময়ে সংসদে তিনটি আইন পাস হয়।