কিবরিয়া হত্যার ১৪ বছর আজ ॥ বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশা

64

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
আজ ভয়াল ২৭ জানুয়ারী। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার ১৪ বছর পূর্ণ হলো। দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে থাকা ভয়ানক এ হত্যান্ডের বিচার প্রক্রিয়া এখন শুরু হয়েছে। কিন্তু ঠিকমতো সাক্ষি না আসা, আসামীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় ঠিকমতো আদালতে হাজির না হতে পারাসহ বিভিন্ন জটিলতায় বিচারকার্য এখন দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে। এ অবস্থায় বিচার নিয়ে এখনও অনিয়শ্চয়তা কাটছেনা নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের মনে।
২০০৫ সালের এ দিনে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া। সভা শেষে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় তিনি ও তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ মোট ৫ জন নিহত হন। এতে আহত হন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এমপি এডভোকেট মো. আবু জাহিরসহ ৪৩ জন। উক্ত ঘটনায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু দফায় দফায় তদন্তের বেড়াজালে আটকে বিলম্বিত হয় এর বিচারকার্য। অবশেষে ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের সর্বশেষ চার্জশিট আদালতে জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র এএসপি মেহেরুন্নেছা পারুল। এতে আসামী করা হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৩২ জনকে। ২০১৫ সালের ২ জুন মামলাটি বিচারের জন্য সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়। এরপর থেকেই মামলার বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু ঠিকমতো সাক্ষি হাজির না হওয়া, একাধিক মামলা থাকায় দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক আসামীদের আদালতে হাজির না করতে পারাসহ নানান কারণে বিচারকার্যে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয়েছে।
নিহত আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলীর পরিবারের সদস্যরা চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচারকার্য বিলম্বিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, ১৪ বছরেও মামলার কোন কিনারা না হওয়ায় হতাশাতো আছেই। তবুও এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দেখতে চান তারা। সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার অনতিবিলম্বে সম্পন্ন করা হবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন।
এ ঘটনায় আহত বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. আবু জাহির জানান, কখনও আসছেনা সাক্ষি, আবার কখনও গুরুত্বপূর্ণ আসামীরা বিভিন্ন মামলার আসামী থাকায় ঠিকমতো আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়না। ফলে কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে যেহেতু ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার বিচার হয়েছে, সেহেতু এ হত্যাকান্ডেরও বিচার অবিলম্বেই সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মামলাগুলোর বাদি এডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান এমপি জানান, বিচারটি চলমান আছে। সবারই প্রত্যাশা বিচারটি তাড়াতাড়ি সম্পন্ন হোক। কিন্তু আইনী জটিলতার কারণে এ বিচার দীর্ঘসূত্রিতায় রূপ পেয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেকের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। বাকি সাক্ষির সাক্ষ্য নেয়ার পর মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হবে। আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই কিবরিয়া হত্যার বিচার হবে।
মামলার আইনজীবী সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি (সরকারি কৌশলী) অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর জানান, এখনও পর্যন্ত ১৭১ জনের মধ্যে ৪৩ জন সাক্ষির সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামীদের ঠিকমতো আদালতে হাজির করতে না পারায় ঠিকমতো সাক্ষ্য নেয়া যাচ্ছেনা। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারী মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, আজ তার বাবার ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। সকাল সাড়ে ৮টায় পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি বাবার কবরে ফুল দেবেন। দোয়া করবেন। সবাই নীল রঙের পোষাক পড়বেন। তিনি বলেন, শুনেছি ৩ বছর ধরে মামলার বিচার চলছে। কিন্তু একটি সুষ্ঠু তদন্তের উদ্যোগ কখনও নেয়া হয়নি। এখন সুষ্ঠু তদন্ত না হলে সুষ্ঠু বিচার হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। অতএব বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আশাবাদি না।