দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রতিবেশী দেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ – প্রধানমন্ত্রী

48
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরিয় অঞ্চলের সিভিল-মিলিটারি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় গ্রুপ (আরসিজি) এর চতুর্থ সেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কার্যকরভাবে মোকাবেলায় এশীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সিভিল-মিলিটারি সমন্বয়ের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিজিওনাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের চতুর্থ সেশনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয় তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুর্যোগ প্রতিরোধ করতে পারব না। তবে আমাদের দূরদর্শী কাজের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করতে পারি। বাংলাদেশে আমরা ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে প্রশমন কর্মসূচির উপর গুরুত্বারোপ করেছি।
তিনি এ সময় মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলার জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা যানবাহন দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা সেতু ধ্বংস, সন্ত্রাসী আক্রমণের মতো মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগকেও উপেক্ষা করতে পারি না। এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়, বিশেষ করে জরুরি প্রস্তুতি এবং সাড়াদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধিতা ও দুর্যোগ-ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত ঢাকা ঘোষণা এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। এটি দুর্যোগ-ঝুঁকি হ্রাসে সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নে প্রায়োগিক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, তার সরকার এক্ষেত্রে সমাজের সকলকে নিয়ে কাজ করার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মানবিক সহায়তার কাজে সব সময় স্বেচ্ছাসেবক এবং সুশীল সমাজের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে থাকে। বর্তমানে প্রায় ২৪ লাখ আনসার ভিডিপি সদস্য, ১৭ লাখ স্কাউটস, ৪ লাখ বিএনসিসি এবং গালর্স গাইডের ৪ লাখ সদস্য যেকোন দুর্যোগ মোকাবিলায় সেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে ৩২ হাজার নগর স্বেচ্ছাসেবক এবং ৫৬ হাজার সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে টেকসই উন্নয়নের নিবিড় সম্পর্কের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমরা বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছি। এ পরিকল্পনার আওতায় আগামী ১০০ বছরের টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলাসহ দুর্যোগ-ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে আমরা ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (ইওসি) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। ফলে নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত ও কার্যকর মানবিক সহায়তা পরিচালনা সম্ভব হবে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মোহাম্মদ এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ শাহ কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক এবং ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপো, স্টেন্টার অব এক্সিলেন্স ইন ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটেরিয়ান এসিসটেন্সের পরিচালক জোসেপ মার্টিন এবং জাতিসংঘের মানবিক বিষয়বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয়ের উপপ্রধান সেবাস্টিয়ান রোডস স্ট্যাম্পা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।