মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

53

মাদকের কারবার থেমে নেই। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে গাঢাকা দেওয়া কারবারিদের অনেকেই সক্রিয় হতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগ নিয়েছে তারা। কেউ কেউ নতুন করে রাজনৈতিক আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলেও খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে মাদক সিন্ডিকেটগুলো গত বছর বারবার তাদের রুট পরিবর্তন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে মাদক কারবারিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এদের অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মাদক কারবার চালিয়ে আসছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু কক্সবাজার এলাকাতেই অনেক জনপ্রতিনিধি প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত বলে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে শুধু ইয়াবার বাজার ছয় হাজার কোটি টাকার। দেশে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ বলে এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তে ২৫০টি পয়েন্ট আছে, যেগুলো দিয়ে মাদক আসে বাংলাদেশে। আবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যের বিরুদ্ধেও মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়েছে। শুধু তরুণ-যুবকরাই নয়, সব বয়সী মানুষ, এমনকি কিশোররাও মাদকে আকৃষ্ট হয়েছে। একবার মাদকে আসক্ত হয়ে পড়লে সহজে বের হয়ে আসা যায় না।

মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না। মাদকসেবীরা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আর সেই কারণে মাদকের বিরুদ্ধে নতুন করে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা দরকার। নতুন আশার বাণী শুনিয়ে নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই অঙ্গীকার থেকেই মাদক কারবারিদের কাছে কঠোর বার্তা দিতে হবে। মাদক কারবারিদের নতুন করে কেউ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে চাইলে তাদের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। মাদকের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযান তখনই সাফল্য পাবে, যখন এর নেপথ্যে থাকবে রাজনৈতিক অঙ্গীকার। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় মাদকের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত হোক বাংলাদেশ।