লোভাছড়ায় রয়েলিটি ছাড়া পাথর বহন নিয়ে উত্তেজনা

31

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারী থেকে ট্রাক ও ট্রাক্টর সহ অন্যান্য যানবাহন দিয়ে কোন ধরনের রাজস্ব ছাড়াই পাথর বহন নিয়ে এলাকায় উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে। কোয়ারী থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাক ও রোড পারমিট বিহীন বেপরোয়া গতির ট্রাক্টর দিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে উত্তোলনকৃত পাথর প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিরেখে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে সরকার প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং কোয়ারী নিয়ন্ত্রণকারী একটি পাথর সিন্ডিকেট প্রভাবশালী চক্র অবৈধ ভাবে পাথর ব্যবসায়ী ও পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িতদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি এই প্রভাবশালী চক্র স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ ভাবে রয়েলটি আদায়ের নামে যানবাহন ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলে সম্প্রতি স্থানীয় সচেতন মহলের মধ্যে বিরোপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অবৈধ পন্থায় রয়েলিটি আদায় বন্ধ এবং কোন ধরনের প্রশাসনিক অনুমতি ব্যতিরেখে কোয়ারী থেকে উত্তোলনকৃত পাথর যানবাহন করে অন্যত্র বিক্রি বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসন কয়েক দিন পূর্ব থেকে পাথর বোঝাই ট্রাক, ট্রাক্টর আটক অভিযানে নেমেছেন। কিন্তু প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন রাতের আঁধারে কোয়ারীতে পরিবেশ বিরোধী ধ্বংস লীলার মাধ্যমে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন সহ শতশত যানবাহন করে সরকারী রয়েলিটি ফাঁকি দিয়ে কোয়ারী থেকে পাথর সরিয়ে নেওয়া অব্যাহত থাকলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম আখতার হোসেন ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নোমান আহমদ রোমান, উপজেলা শ্রমীকলীগের কার্যকারী কমিটির সভাপতি ফরিদ আহমদ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদের সভাপতি আলমগীর হোসেন, যুবলীগ নেতা আলম উদ্দিন, হেলাল আহমদ হেলালী, নজরুল ইসলাম, দেলওয়ার, কাওছার আহমদ, জাকারিয়া, জেলা ছাত্রলীগ নেতা আক্তারুজ্জামান হিমেল সহ বেশ কিছু নেতাকর্মী স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে কানাইঘাট-দরবস্ত সড়কের পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে দিন ও রাতের বেলা অবস্থান করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে অবধৈ ভাবে কোয়ারী থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাথর বহনকারী যানবাহন আটক করতে থাকেন। এ নিয়ে যানবাহনের মালিক ও পাথর ব্যবসায়ীদের সাথে যানবাহন আটককারীদের মধ্যে শুক্রবার গভীর রাতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩টি পাথর বোঝাই ট্রাক আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। গাড়ীর মালিক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ রাস্তায় পাথর বহনকারী ট্রাক ও ট্রাক্টর আটক করে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম আখতার হোসেন জানিয়েছেন, পাথর কোয়ারীতে যে বেআইনী কর্মকান্ড চলছে এতে করে স্থানীয় ভাবে কিছু প্রভাবশালী লোকজন ব্যাক্তিগত ভাবে তারা লাভবান হলেও স্থানীয় ভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। সরকারের কোন ধরনের নিদের্শনা ছাড়াই কোয়ারী থেকে প্রতিদিন শতশত ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে পাথর বহন করে সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা সরকার পাথর থেকে রাজস্ব হারিয়েছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নামায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাদের দাবী প্রশাসনের উদ্যোগে কোয়ারী থেকে রয়েলিটি আদায়ের মাধ্যমে সরকারের কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা হোক এবং লুটপাট কারীদের বেআইনী কর্মকান্ড বন্ধ করা হোক। গত বৃহস্পতিবার আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ভূমি কর্মকর্তার সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করে ৩টি পাথর বোঝাই ট্রাক্টর তাকে বুঝিয়ে দেই। তিনি প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। কোয়ারীতে নীতিমালা ব্যতিরেখে বেআইনী ভাবে শতশত গভীর বড় ধরনের গর্ত তৈরী করে লোভা নদীর পার ভেঙ্গে এস্কেব্যটর, ফেলোডার, বেলাই বোমা মেশিন ও শতাধিক যান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে পাথর উত্তোলনের বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসিকান্ত হাজং জানান, কোয়ারী এলাকায় অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনের সাথে যারা জড়িত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মধ্যখানে নির্বাচন নিয়ে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। বর্তমানে অভিযান আরো জোরদার করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে কোন ধরনের নিদের্শনা ছাড়া কোয়ারী থেকে পাথর বহনের দায়ে বেশ কিছু ট্রাক ও ট্রাক্টর আটক করে পাথরগুলো জব্দ করা হয়েছে এবং অবৈধ ভাবে প্রশাসনিক নিদের্শ ছাড়া রয়েলিটি আদায় বন্ধ করা হয়েছে। ট্রাক ও ট্রাক্টর আটক করে পাথর জব্দ অভিযান আমরা আরো জোরদার করেছি। ভূমি কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং আরো বলেন, এখন পর্যন্ত কোয়ারীর পাথর সরবরাহ বা মওজুদকৃত পাথর প্রশাসন অথবা কাউকে রয়েলিটি আদায়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিধায় অবৈধ ভাবে কোয়ারী থেকে যারা যানবাহনে করে পাথর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য সরকারী নির্দেশনায় দেশের অন্যান্য পাথর মহাল থেকে বৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি লোভাছড়া পাথর কোয়ারী থেকে একটি পাথর শ্রমিক সংগঠনের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট কোন ধরণের যান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া শ্রমীকদের পাথর উত্তোলন করে মওজুদের নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন করে বেআইনি ভাবে কোন ধরনের প্রশাসনিক অনুমতি ব্যতি রেখে সেখান থেকে ট্রাক্টরসহ যানবাহন ব্যবহার করে অন্যত্র পাথর সরবরাহ করা হচ্ছে যা বে-আইনী বলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও জানান।