শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তারুণ্য নির্ভর মন্ত্রী সভার শপথ

140
বঙ্গভবনের দরবার হলে নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শপথ বাক্য পাঠ করাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘সমৃদ্ধ অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকারে অবিস্মরণীয় বিজয়ের মহাযোদ্ধা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৭ সদস্যের তারুণ্য নির্ভর চমকের মন্ত্রী সভা শপথ নিয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বঙ্গভবনের দরবার হলে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রথমে দেশের ইতিহাসে নজির ও রেকর্ড সৃষ্টি করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। পরে তিন দফায় ২৪ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ উপমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন। শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ইতিহাস সৃষ্টিকারী নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের চতুর্থ দফা সরকারের অগ্নিপরীক্ষা। দেশের মানুষের চোখে এখন দিন বদল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কীভাবে স্বপ্ন পূরণের পথে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। ক্ষুধা-দারিদ্র্য, দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ার এক অন্য রকম চ্যালেঞ্জ নিয়েই টানা তৃতীয়বার সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীকে শপথ বাক্য পাঠ করাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। ছবি (উপর) থেকে।

মন্ত্রী সভায় চমক আসবে, এটা আগেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এতবড় চমক, যা রীতিমতো সবার ধারণারই বাইরে ছিল। অনেকেই বলছেন এটি চমক নয়, রীতিমতো ‘মহাচমক’। মন্ত্রীদের পুরনো প্রায় সবই বাদ, নতুনদের জয়জয়কার। হেভিওয়েট প্রায় সব নেতাকেই সাইড লাইনে রেখে কিছু প্রবীণ, আর অধিকাংশ তারুণ্যে নির্ভর নবীন নতুন মুখকেই মন্ত্রী সভায় স্থান দিয়ে সারাদেশে রীতিমতো তোলপাড়েরই সৃষ্টি করেন প্রধানমন্ত্রী। আগের মন্ত্রিসভার ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রীই বাদ পড়েছেন এবার। কেবল পূর্ণ মন্ত্রী নয়, প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যেও বড় একটি অংশ এবার মন্ত্রী সভায় স্থান পাননি। তাদের সংখ্যা ৯ জন। নতুন মন্ত্রী সভায় ২৭ জনই নতুন মুখ। এই নতুনদের ওপর আস্থা রেখেই চমকের মন্ত্রী সভা নিয়ে চতুর্থবারের মতো গঠিত সরকারের যাত্রার সূচনা করলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নতুন সরকারের মন্ত্রী সভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য বঙ্গভবন বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়। দরবার হলে সহস্রাধিক আমন্ত্রিত অতিথির বসার ব্যবস্থা করা হয়। কোরআন তেলাওয়াতের পর সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী সভার সদস্যদের শপথ করান রাষ্ট্রপতি। পরে অতিথিদের চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানানো হয়। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
গত বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের সময়ই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ হাসিনাকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানান। রবিবারই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত নতুন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগপত্র হস্তান্তর এবং তাঁর কাছ থেকে নতুন মন্ত্রী পরিষদের নামের তালিকা গ্রহণ করেন। আগে শপথ গ্রহণের পর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের মাঝে দফতর বণ্টন করা হলেও এবার সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মন্ত্রী সভার তালিকা এবং তাঁদের মাঝে বণ্টনকৃত দফতর জানিয়ে দেয় মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রী সভায় যারা শপথ নিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সরকারে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে যারা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথবাক্য পাঠ করেন তারা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ওবায়দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসাদুজ্জামান খান, তথ্য মন্ত্রণালয় ড. হাছান মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আনিসুল হক, অর্থ মন্ত্রণালয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে মোঃ তাজুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ডাঃ দীপু মনি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এম এ মান্নান, শিল্প মন্ত্রণালয়ে নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জাহিদ মালেক, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নুরুজ্জামান আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে মোঃ শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, ভূমি মন্ত্রণালয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে মোস্তাফা জব্বার।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর ছোট বোন শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

আর ১৯ জন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ে কামাল আহমেদ মজুমদার, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ইমরান আহমেদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে জাহিদ আহসান রাসেল, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে নসরুল হামিদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোঃ জাকির হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মোঃ শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফরহাদ হোসেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে স্বপন ভট্টাচার্য, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জাহিদ ফারুক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মোঃ মুরাদ হাসান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কে এম খালিদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে মোঃ মাহবুব আলী এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে শপথ পড়িয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে বেগম হাবিবুন নাহার, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ কে এম এনামুল হক শামীম এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীকে উপমন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পড়ানো হয়।
চতুর্থ দফা সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মন্ত্রী সভার সকল সদস্যকে নিয়ে প্রথমে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন। এরপর যাবেন সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সেখানে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আগামীকাল বুধবার মন্ত্রী সভার সদস্যদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন।
শপথগ্রহণ শেষে বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং টানা দ্বিতীয়বার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়া ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে ইশতেহার অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ। এটি আমরা প্রথমেও করবও, ভবিষ্যতেও করবও। আমরা ইশতেহারের সব প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালনের চেষ্টা করবও। বাদ পড়াদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এখানে হারানোর কিছু নেই। এটা দায়িত্বের পরিবর্তন, দায়িত্বের রূপান্তর। আমাদের সরকারের মধ্যে দলটা হারিয়ে যাক, আমরা তা চাই না। সেখানে সরকার আর দলের যে আলাদা সত্তা আছে, সেটা রাখতে হলে রেসপন্সিবল লিডারদের একটা অংশকে দলের দায়িত্বে রাখতে হবে।
এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত : মহাবিজয় নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। তাই দুপুরের পর থেকেই বঙ্গভবনের চতুর্দিকে ঔৎসুক্য নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। বেলা তিনটার আগ থেকেই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী মুজিব কোর্ট পরিহিত একাদশ জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছাড়াও মহাজোটের সংসদ সদস্য এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে শুরু করেন। তিনটা থেকে সরকারী গাড়িতে করে আসতে থাকেন নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা। সাড়ে তিনটার আগেই বঙ্গভবনের আলোকোজ্জ্বল দরবার হল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। দরবার হলে জায়গা না হওয়ায় বাইরের বিশাল লনেও বড় বড় ডিজিটাল স্ক্রিনের মাধ্যমে উপস্থিত সবাইকে মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে দেখা যায়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিকেলে বঙ্গভবনে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি তাকে স্বাগত জানান। বেলা সাড়ে ৩টা বাজার সামান্য আগে হাল্কা নীলের জামদানি শাড়ি পরে দরবার হলে প্রবেশ করেন হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার একটু আগেই আসেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী দরবার হলে প্রবেশ করলে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে ও তুমুল করতালি দিয়ে চতুর্থবারের ভাবী প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও স্বাগত জানান। শেখ হাসিনা এ সময় দাঁড়িয়ে সবার প্রতি সালাম দেন। ঘড়ির কাঁটায় ৩টা ৩৪ মিনিটে জাতীয় সঙ্গীদের মূর্ছনার মধ্যে দরবার হলে প্রবেশ করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এ সময় সবাই দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানান। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিক পর্ব শুরু হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের পরিচালনায় প্রথমে সংবিধানের ৫৬ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ হাসিনাকে নিয়োগ দেন এবং পরে তাঁকে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পাঠ করান। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন ও গোপনীয়তার শপথ নেন শেখ হাসিনা। পরে রাষ্ট্রপতি ও নতুন প্রধানমন্ত্রী শপথনামা ও নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর দেন। এরপর রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে স্বাগত জানান। শপথগ্রহণ শেষ হওয়া মাত্রই তুমুল করতালির মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান আমন্ত্রিত অতিথিরা। প্রধানমন্ত্রীও সবার উদ্দেশে সালাম জানান।
শপথ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজ আসনে ফিরে এলে ছোট বোন শেখ রেহানা তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন সূচনায় পরস্পরের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হন বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে। সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে নেন এবং গালে চুমু খান। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গেও করমর্দন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে হাত নেড়ে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসন গ্রহণ করেন ইতিহাসের রেকর্ড সৃষ্টি করে টানা চতুর্থ বারের এই প্রধানমন্ত্রী। শেখ রেহানা ছাড়াও তাঁর ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক সস্ত্রীক এসেছিলেন নতুন মন্ত্রী সভার শপথ অনুষ্ঠানে।
এরপর সংবিধানের ৫৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিন দফায় নতুন সরকারের নিয়োগকৃত ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রীকে একে এক শপথ করান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। শপথগ্রহণের পর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা শপথ ও গোপনীয়তা রক্ষার শপথ নামায় স্বাক্ষর করেন। এরপর পুনরায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষ হয়। প্রায় ৩১ মিনিটের শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানপর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের চা-চক্রে আপ্যায়িত করেন রাষ্ট্রপতি। পরে প্রধানমন্ত্রী সেখানে ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে শপথগ্রহণ শেষে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা সংবলিত গাড়িতে করে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে। মন্ত্রীরাও পতাকা উড়িয়ে চলে যান যে যাঁর গন্তব্যে।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে নুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, গওহর রিজভী, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সামরিক-বেসামরিক উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা নতুন সরকারের অভিষেকে উপস্থিত ছিলেন।
জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খান মাসুদ, বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকরাও শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তবে বিরোধী দলের আসনে যাওয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদকে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। আর নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়ায় ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি গঠিত পুরনো সরকারের দায়িত্ব শেষ হলো। প্রধানমন্ত্রী নতুন করে তাঁর উপদেষ্টা নিয়োগ দেবেন।