জাতীয় পার্টি এবার বিরোধী দলে, নেতা এরশাদ

37

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিরোধী দল, নাকি সরকারে নির্বাচনের পর থেকে এ সিদ্ধান্ত নিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতারা। টানা কয়েকদিন এই ইস্যুতে হইচইয়ের পর অবশেষ মুখ খুলছেন জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ না দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা নেয়ার কথা জানান তিনি। যদিও তার এ সিদ্ধান্তের পর জাপায় নানামুখী আলোচনা চলছে। দলের অনেক সংসদ সদস্য ও তিন মন্ত্রীর সবাই সরকার ও বিরোধী দলে থাকার পক্ষে। তারা চান বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে চূড়ান্ত ফয়সালা হোক।
নির্বাচনের আগে-পরে নানা নাটকীয়তার মধ্যে জাপার প্রেস উইং থেকে এরশাদের স্বাক্ষরে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পদাধিকার বলে তিনিই হবেন জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি পার্টির সভাপতি ও প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। শুক্রবার পাঠানো ওই বার্তায় ছোট ভাই পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধী দলের উপনেতার দায়িত্বও দেন এরশাদ। তবে এরশাদের স্ত্রী দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ভূমিকা এবার কি হবে, সে বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু জানানো হয়নি। যদিও বৃহস্পতিবার দলের ২২ নির্বাচিত এমপির সঙ্গে রওশনও শপথ নিয়েছেন। যদিও শপথ নেননি এরশাদ নিজে। দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, আগামী তিনদিনের মধ্যে তার শপথ নেয়ার কথা আছে। এদিকে এরশাদ মন্ত্রী পদমর্যাদার কোন পদে এবার থাকতে চান না বলে তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
দশম সংসদে একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থেকে গৃহপালিত বিরোধী দল আখ্যা পাওয়া জাপার কোন এমপি এবার মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত হবেন না বলে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত এসেছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ।
বিএনপি ও শরিকদের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ৩৪ ও সংরক্ষিত মিলিয়ে ৪০ আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় বসে। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ হন বিরোধীদলীয় নেতা। পাশাপাশি জাপা থেকে একজনকে মন্ত্রী এবং দুজনকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এরশাদকে করেন নিজের ‘বিশেষ দূত’। পরস্পরবিরোধী ওই অবস্থানের কারণে সংসদের মেয়াদের পুরোটা সময় সমালোচনায় বিদ্ধ হয় জাতীয় পার্টি। এরশাদের কথাতেও এ বিষয়ে নানা সময়ে নানা অসন্তোষ প্রকাশ পায়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক ২৫৯ আসন পেয়েছে। তাদের জোটসঙ্গীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ২২ এবং অন্য শরিক আট। অপরদিকে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সব মিলিয়ে সাত আসন পাওয়ায় তাদের সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেছে। তবে সংবিধান অনুযায়ী যে দল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাবে তারাই বিরোধী দল গঠন করতে পারবে। এক্ষেত্রে আসন সংখ্যার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। জাতীয় পার্টি এবারেও নির্বাচনে মহাজোটে অংশ নেয়ায় সরকার ও বিরোধী দলে থাকতে তাই কোন সমস্যা নেই।
বার বার সিদ্ধান্ত বদলে আলোচিত এরশাদ। গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই নতুন বিরোধী দল নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু জাপা নেতারা সিদ্ধান্ত জানানোর আগে জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলছিলেন।
জাতীয় পার্টি এবারও সরকারের অংশীদার হবে কিনা প্রশ্নে দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের দুদিন আগেও বলেন, সম্ভাবনার কথা বলা যায় না। সব রকম সম্ভাবনাই আছে। জাপা সংসদে যাওয়ার পর কারা মন্ত্রিত্ব পাবেন, এ নিয়ে এখনও কিছু ঠিক হয়নি। আমরা এটা নিয়ে পরে মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করব। মঙ্গলবারের বৈঠকেও এ বিষয়ে ইতিবাচক কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
কথা ছিল, বুধবার একাদশ সংসদের এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার পর জাপা সংসদীয় পার্টির বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। শেষ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। বরং বিরোধী দলের এমপিদের বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। জাপার বর্তমান মন্ত্রীসহ অনেকেই চান সরকার ও বিরোধী দলে থাকতে। এ নিয়ে বৈঠকে তুমুল হইচই হয়। অবশেষে রওশনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই। সংসদ ভবনে বৈঠক শেষে জি এম কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সামনে পার্টির একটি মিটিং আছে, সেখানে বসে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সরকার বা বিরোধী দল কোথাও থাকতে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোন বৈঠক ছাড়াই হঠাৎ শুক্রবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত জানালেন এরশাদ, যিনি ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের কারণে বহু আগেই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ আখ্যা পেয়েছেন। তবে দলে চলমান সঙ্কট নিয়ে এরশাদ শেষ পর্যন্ত মুখ খুললেও এর সর্বশেষ পরিণতি কি এখন সেটাই দেখার বিষয়।