জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকলে মন্ত্রী সভায় যোগ দেবে না

37

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসলে আর মন্ত্রিসভায় যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জাতীয় পার্টিতে। দলটি মনে করছে, এই দ্বৈত ভূমিকার কারণে গত পাঁচ বছরে অনেক সমালোচনা হয়েছে দলের।
বুধবার রাজধানীর বনানীতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলের সভাপতিমন্ডলী ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় এই মত উঠে আসে। এরশাদের অবর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার এই সভায় দলের নবনির্বাচিত ১৪ জন সংসদ সদস্যসহ ৩৬ জন অংশ নেন।
দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অসুস্থতার কারণে অংশ নিতে পারেননি সভায়। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, সাবেক দুই মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ সভায় অনুপস্থিত ছিলেন সভাপতিমন্ডলীর আরো বেশ কয়েকজন সদস্য।
সভায় জাতীয় পার্টি সরকারে থাকবে নাকি বিরোধীদল হবে-এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা থাকলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। নেতাদের একটি অংশ সরকারে থাকার প্রস্তাব করেছে। তারা বলছেন, মহাজোটের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে। কাজেই তারা সরকারেরই অংশ। আর বিরোধীদলে থেকে কোনো লাভ নেই। আরেকটি অংশ জাতীয় পার্টিকে সংসদে বিরোধীদল হওয়ার প্রস্তাব করেছে। তবে বিরোধীদলে থাকলে সরকারে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন।
নেতারা বলেছেন, বিরোধীদল হলে সংসদে বিরোধীদলের মতই হতে হবে ভূমিকা। বিরোধীদল হয়ে মন্ত্রিসভায় থাকলে জনমত পক্ষে থাকে না। এতে দলের প্রতি আস্থা থাকে না।
জাতীয় পার্টির সাবেক এক সংসদ সদস্য বলেন, ‘হয় আমরা সরকারে থাকব অথবা বিরোধীদলে থাকব। বিরোধীদলে থেকে মন্ত্রিত্ব নেওয়া ঠিক হবে না। এরকম করলে জনগণ জাতীয় পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’
সভায় অংশগ্রহণকারী নেতাদের বেশিরভাগই তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
তবে সরকারে থাকার পক্ষে মত দেন ঢাকা-৪ আসন থেকে জেতা সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা। বলেন, ‘মহাজোটের কারণেই আজ আমরা এমপি হয়েছি। শেখ হাসিনা এখন ট্রাম্প-মোদির সঙ্গে। ড. কামালদের সঙ্গে রাজনীতি করার সময় তার নেই। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, সরকারে না থাকলে আমাদের এলাকার উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।’
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সল চিশতি বলেন, ‘হয় সরকারে থাকতে হবে নয়তো বিরোধীদল হতে হবে। সরকারে থাকলে সরকারই। বিরোধীদলে গেলে মন্ত্রিসভায় থাকা যাবে না। আধাআধি কোনো বিষয় চাইছেন না দলের নেতারা। যৌথ সভায় সবাই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন।’
সভা শেষে মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার এমপিদের শপথ গ্রহণের পর দলের পার্লামেন্টারি পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সরকারে থাকব নাকি বিরোধীদল হব।’
জি এম কাদের বলেন, ‘এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনসংখ্যার দিক দিকে আওয়ামী লীগের পরেই আমাদের অবস্থান। আমরা মহাজোটে ছিলাম, এখনো আছি। একসঙ্গে মিলেমিশে আমরা নির্বাচন করেছি। এসব বিষয়েও একসঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’
মহাজোটে আসন প্রাপ্তি নিয়ে ক্ষোভ : সভায় নির্বাচনের আগে আসন বণ্টন, মনোনয়ন বাণিজ্য, উন্মুক্ত আসন নিয়ে সুুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসাসহ নানা বিষয়ে ক্ষোভ ঝারেন নেতারা। এসব বিষয়ে তারা দলের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেতারা বলেন, দলের ত্যাগী অনেক নেতাকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে সঠিক ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার অভাবে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছেন উন্মুক্ত আসনের প্রার্থীরা।
ঢাকার একটি আসনে হেরে যাওয়া জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থী বলেন, ‘গত ১০ বছরে জাতীয় পার্টির জন্য অনেক শ্রম দিয়েছি। কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচনে সেই পার্টিকেই পাশে পাইনি। পার্টি আমার পক্ষে অবস্থান নিলে আমি জিতে যেতাম। আমি মনে করি সংসদে আমাদের সত্যিকারের বিরোধীদল হওয়া উচিত।’
মনোনয়ন বঞ্চিত সভাপতিমন্ডলীর এক জন সদস্য বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পার্টির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহাজোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি আমাকে। এ অবস্থায় আগামীতে এ পার্টির সঙ্গে থাকব কি না- সেটাই এখন ভাবার বিষয়।’
মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে জাতীয় পার্টির ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুন্ন না হয়, সে ব্যাপারে আগামীতে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেয়া হয় সভায়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সঙ্গে পার্টির সম্পর্কেরও সমালোচনা করেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা।
একজন নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বার্থে জাতীয় পার্টি ব্যবহার হয়ে আসছে। তাদের প্রয়োজন হলেই কেবল তারা এরশাদের জাপাকে কাছে টেনে নেয়। প্রয়োজন ফুরালেই ছুড়ে ফেলে দেয়।’