সিলেট-৫ আসনে বাড়ছে অপ্রীতিকর ঘটনা, ভোটাররা শংকিত

49

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনে নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মুহূর্তে নিবার্চনী উৎসবের পরিবর্তে এক ধরণের ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে সাধারণ ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে কেন্দ্রে গিয়ে র্নিভয়ে ভোট দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে ভোটারদের মাঝে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সিলেট-৫ আসনের নির্বাচনী এলাকায় সকল দলের নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে কোন ধরনের সংঘাতের ঘটনা না ঘটলেও নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ভোটের মাঠে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনাসহ ভয় ভীতি প্রদর্শন, হামলা, ভাংচুর, মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানীর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ ভোটাররা শংকিত হয়ে পড়েছেন। ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি লক্ষ্য করা গেছে। এতো দিন নির্বাচনী প্রচারণা সকল প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে উৎসব মুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান থাকলেও নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে অপ্রীতিকর ঘটনা। গত ২২ ডিসেম্বর গভীর রাতে কানাইঘাটের চাউরা এলাকায় নৌকার কয়েকটি পোস্টার কেবা কাহারা পুড়িয়ে দিলে এঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২ শতাধিকের মতো ঐক্য ফ্রন্টের নেতাকর্মীদের আসামী করে মামলা করেন, সদর ইউনিয় আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন। উক্ত মামলা দায়েরের পর থেকে থানা ও ডিবি পুলিশ আসামীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার অভিযান শুরু করায় বিএনপি, জামায়ত, জমিতের নেতাকর্মী ও ধানের শীষের সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ উক্ত মামলার আসামী দেখিয়ে ইতিমধ্যে সুরইঘাট এলাকার বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম ও বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি সদস্য মইন উদ্দিন এবং চতুল এলাকার বিএনপি সমর্থক ফয়জুল্লাকে গ্রেফতার করেছে। জানা যায়, গত ২৪ ডিসেম্বর কানাইঘাটের ভবানীগঞ্জ বাজারে সন্ধ্যার দিকে ধানের শীষের প্রার্থী মাওঃ ওবায়দুল্লাহ ফারুক নির্বাচনী সভা ডাকলে পাল্টা সেখানে নৌকা মার্কার প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদারের সমর্থনে স্থানীয় আ’লীগ নেতাকর্মীরা নির্বাচনী সভার আয়োজন করলে বাজারে উভয় পার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে নৌকার সমর্থকরা বাজারে অবস্থিত ধানের শীষের অফিস ব্যাপক ভাংচুর করেন। পাল্টা সাতবাক ইউপি আ’লীগের সভাপতি মখদ্দুছ আলীর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ঐক্য ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা ভাঙ্গচুর করেছে এমন অভিযোগ এন ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি ও জামাতের বেশকিছু নেতাকর্মীদের আসামী করে কানাইঘাট থানায় মামলা করেন স্থানীয় এক আ’লীগ নেতা। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে জকিঞ্জ উপজেলার বারহাল শাহবাগ এলাকার মহিদপুরে নৌকা মার্কার নির্বাচনী প্রচারণার অটোরিক্সা সিএনজি গাড়িতে দুষ্কৃতিকারীরা পেট্্েরাল বোমা ছুড়ে মারলে গাড়িটি পুড়ে গিয়ে চালক সহ দুইজন আহত হন। এসব ঘটনার জন্য আ’লীগের পক্ষ থেকে ধানের শীষ প্রতীকের সমর্থকদের দায়ী করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ নৌকা মার্কার বিজয় টেকাতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা সেই আগের মতো জঙ্গি কার্যক্রম ও নাশকতা আবারো শুরু করেছে। জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে নৌকা প্রতীক কে বিজয়ী করবে। অপর দিকে ধানের শীষের প্রার্থী মাওঃ ওবায়দুল্লাহ ফারুক ও ঐক্য ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ পাল্টা আ’লীগকে দায়ী করে বলেছেন, ধানের শীষের গণজোয়ার দেখে নির্বাচনী এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি ও মামলা হামলা করে নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে রাখার জন্য আ’লীগের নেতাকর্মীরা নিজেরাই পরিকল্পিত ভাবে এসব ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটিয়ে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে নেতাকর্মীদের হয়রানী ও ভোটারদের মাঝে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ পুলিশের অব্যাহত বাধার মুখে ধানের শীষের কয়েকটি নির্বাচনী সমাবেশ গত ২ দিন তারা কানাইঘাটের সড়কের বাজার, ছোটদেশ নয়াবাজার, ভবানীগঞ্জ বাজারে করতে পারেনি। প্রতিদিন থানা ও ডিবি পুলিশ শতশত নেতাকর্মীদের বসা বাড়িতে গিয়ে অভিযান চালিয়ে হয়রানী করে যাচ্ছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে গ্রেফতার অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে ২৫ জনের অধিক নেতা কর্মীকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। নৌকা মার্কার সমর্থকরা নির্বাচনী আচরণ বিধি অমান্য করে দিন-রাত প্রচারণা ও আমাদের হুমকি ধমকি দিলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করায় নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না এনিয়ে সংসয় প্রকাশ করেছেন ধানের শীষের প্রার্থী ওবায়দুল্লাহ ফারুক। তার দাবী আ’লীগের নেতারা প্রকাশ্যে সভা সমাবেশে ভোট কেন্দ্র দখলের ঘোষণা দিচ্ছেন। এদিকে পুলিশি গ্রেফতার ও অভিযানে ঐক্য ফন্টের নেতাকর্মীরা এক ধরনের পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গ্রেফতার অভিযান বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক দিন থেকে বিএনপি ও জামায়াতের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতৃবৃন্দকে ধানের শীষের প্রচারণায় দেখা যায়নি। সিলেট-৫ আসন থেকে এবারে নির্বাচনে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এ আসনে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার, ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী মাওঃ ওবায়দুল্লাহ ফারুক ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আলহাজ¦ সেলিম উদ্দিনের মধ্যে মূলত ত্রি-মুখী লড়াই হবে বলে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। নির্বাচনী এলাকার ভীতিকর পরিবেশ দূর করে উৎসব মুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণে সর্বস্তরের ভোটাররা সেনাবাহিনীর উপর আস্থা রেখে নির্বাচনী এলাকায় টহল জোরদার ও ভোটাররা নির্ভয়ে যাতে করে কেন্দ্রে এসে ভোট প্রদান করতে পারেন এমন পরিবেশ তৈরী করার জন্য সচেতন মহল দাবী জানিয়েছেন।