নির্বাচন সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে প্রয়োজন

220

শঙ্কাহীন উৎসবমুখর নির্বাচন সবার কাম্য হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা থেমে নেই। নির্বাচনের স্বাভাবিক চিত্র যেমন হওয়া উচিত, অনেক স্থানেই তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচনী উত্তাপের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নৌকার প্রার্থীর ভোটের প্রচার লক্ষ্য করে ছোড়া পেট্রলবোমায় তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শেরপুরে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা প্রতিপক্ষের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর এসেছে গণমাধ্যমে। গুরুতর আহত দুজনকে ঢাকার হাসপাতালে আনা হয়েছে। দেশের অনেক এলাকা থেকেই নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলার খবর এসেছে। গণসংযোগে বাধা দেওয়া হচ্ছে। গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের সমর্থকদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেখানে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সবার কাম্য, সেখানে এ ধরনের ঘটনা মানুষের কাছে নেতিবাচক বার্তা নিয়ে যাবে। বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটিও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আশা করছে। এই নির্বাচনটি বাংলাদেশের মতোই যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে দেশটি। জাতিসংঘও একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে। নির্বাচনের দিনটি যতই এগিয়ে আসবে, উত্তাপ-উত্তেজনা ততই বাড়বে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না। দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানালে কোনো কর্মী-সমর্থকই সংঘাত-সংঘর্ষে জড়াবে না। কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে কর্মী-সমর্থকদের কোনো অংশ অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে দল থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সবারই মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের সময় একটি গোষ্ঠী ব্যবহৃত হওয়ার জন্য তৈরি থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পেশিশক্তির ব্যবহার যে হয়ে থাকে, তা অস্বীকার করা যাবে না। একই সঙ্গে অস্বীকার করা যাবে না জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বাইরে বেরিয়ে আসার আশঙ্কাও। রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্ব-কলহের সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে আতঙ্ক ছড়াতে পারে, এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। আর সে কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, তখনই সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সিলেট। জেলার ছয়টি নির্বাচনী এলাকার সব কয়টিতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রয়েছে। কোনো আসনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। এমনকি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতাকর্মীরা একে অন্যের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতেও দ্বিধা করছেন না। নির্বাচনী মাঠের চিত্র তো এমনই হওয়া দরকার। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু তাতে মনান্তর ঘটবে না। সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। সিলেটের মতো সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক সর্বত্র।