সুলতান মনসুরের খোলা চিঠি

30

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
গণমাধ্যম স্থানীয় ভোটার ও জনগণের কাছে খোলা চিঠি দিয়ে ভোটের মাঠের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানালেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জাতীয় ঐক্যফন্টের কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। নিজ নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও পরিকল্পিত ভাবে মিথ্যা মামলার বিষয় নিয়ে গণমাধ্যম ও স্থানীয় জনগণের কাছে তিনি এই খোলাচিঠি দিয়েছেন। তার এই খোলা চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এখন ভাইরাল হচ্ছে। লিফলেট আকারে তা স্থানীয় ভোটার ও জনগণের হাতেও পৌঁছানো হচ্ছে। গতকাল দুপুরে গণমাধ্যমে প্রেরিত তার খোলা চিঠিটি হুবুহু তুলে ধরা হল। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পূর্বক আমার প্রাণপ্রিয় কুলাউড়াবাসী, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদ্দেশ্যে নিবেদন করছি। আজ দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের প্রতি নিবেদন করছি, কুলাউড়ার গত সাত দশকের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও মানবিক মূল্যবোধের ইতিহাস। ধনী, দরিদ্র, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সামাজিকতা ও ভ্রাতৃত্বের ইতিহাস। যা আমরা সকলেরই পরম গৌরবের তীর্থক্ষেত্র। যা কুলাউড়ার সুনাম ও ঐতিহ্য। দলমত নির্বিশেষ সম্প্রীতিময় ঐক্যবদ্ধ কুলাউড়া আমাদের জন্য মহান সম্মানজনক। কিন্তু আজ কেন এ কুলাউড়ার জনগণকে বিভক্ত করা হচ্ছে? আমাদের পাস্পরিক সম্মানকে ভূলুন্ঠিত করা হচ্ছে? আমাদের তরুণ সমাজকে হিংসা, বিদ্ধেষ ও পারস্পরিক ঘৃণার অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? বরাবরই যে কোন নির্বাচনের সময় কুলাউড়ার মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন, যাকে খুশি তাকে ভোট প্রদান করেছেন, নির্বাচনী আনন্দ আমরা প্রতিপক্ষের সাথেও বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির মাধ্যমে উপভোগ করেছি। এতে সকলেই সম্মানিত হয়েছি। যা ছিলো এই কুলাউড়ার অহংকার আমাদের পূর্ব পুরুষগণের শিক্ষা। তবে আজ কে বা কাদের ইন্ধনে আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের শিক্ষাকে পদদলিত করছি। আজ নির্বাচনী আনন্দযজ্ঞের সময়ে ঐক্যফন্ট ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আমার নেতাকর্মীদের বিনা কারণে ও কৃত্রিম অজুহাতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ক্ষমতার বদৌলতে তাদের নামে মিথ্যা মামলা, হুলিয়া জারীকরা হচ্ছে। তারা বাড়ি ঘরে থাকতে পারছে না। তাদের পরিবার পরিজন উৎকন্ঠায়। আজ তাদের মায়ের চোখের অশ্র“ আর বোনের কান্নায় কুলাউড়ার আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে। সমাজ হচ্ছে কলুষিত ? কেন বিনা অপরাধে কারান্তরীণ সন্তানের জন্য একেকজন পিতার করুণ আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে ? কেন স্বামীর জন্য প্রিয়তমা স্ত্রীর কান্না আর সন্তানদের আহাজারীতে কুলাউড়ার ঘরে ঘরে উৎকন্ঠা ও বিষাদের করুণ সুর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে? এতো আমাদের পূর্ব পুরুষের মানবিক মূল্যবোধের কুলাউড়া নয়! এভাবে কি কোন সম্প্রীতির সমাজ কল্পনা করা যায়? এভাবে কি সামাজিক মূল্যবোধের সহাবস্থান সম্ভব? যা অতীব দুঃখজনক। আমি মিথ্যা মামলা ও পুলিশী নির্যাতনের শিকার প্রতিটি নেতাকর্মী এবং তাদের বেদনাকাঁতর ও উৎকন্ঠিত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। রাজনীতি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমাদের সমাজে একই পরিবারের সন্তান নানা দলের রাজনীতি করেন। সুতরাং আমরা নানা দল ও আদর্শে বিভক্ত থাকলেও আমাদের মধ্যে আত্মীয়তা, রক্ত ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি পরিবারে আঘাত লাগলে অন্য পরিবারে কান্নার রোল উঠে। তাই আমি সর্বদা সম্প্রীতিময় ঐক্যবদ্ধ কুলাউড়ায় বিশ্বাসী। আমি যখন এম,পি ছিলাম একটি মুহূর্তের জন্য ঘূর্ণাক্ষরেও আমি প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের দমনের চিন্তা করি নাই। আমি দেখেছি কুলাউড়ার মান মর্যাদা। আমি দেখেছি কুলাউড়াবাসীর ঐক্য ও গৌরব। ছলে বলে কৌশলে প্রতিপক্ষ দমনের কৌশল কখনো রাজনীতির হাতিয়ার হতে পারেনা। তা মানুষের মাঝে ঘৃণা ও হিংসার বিষবাষ্প ছড়ায়। যা একটি সমাজের মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দেয়। আজ কুলাউড়ার নির্বাচনী মাঠে প্রতিটি দলের প্রার্থী, নেতাকর্মী, সংগঠক, সমর্থক, ভোটার, কুলাউড়ার সাধারণ জনগণ ও প্রশাসনের উদ্দেশ্যে আমার আকুল আবেদন, আসুন আমরা স্বাধীনভাবে প্রত্যেকের নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাই এবং কুলাউড়ার আবহমান কালের চিরায়ত সম্প্রীতির ঐতিহ্য রক্ষা করি। এরই সাথে যারা বিনা অপরাধে ছলে বলে কৌশলে ঘৃণ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর সাজানো মিথ্যা মামলা-হুলিয়া জারীর পাঁয়তারা করছেন তাদের প্রত্যাখান ও প্রতিরোধ করি। এরা আমাদের বন্ধু নয় শত্র“। এদেরকে সমাজ ও মানবতার দুশমন হিসেবে চিহ্নিত করি। সম্প্রীতিময় কুলাউড়ার জয় হোক। অশুভ শক্তির বিনাশ হোক। বিনীত আপনাদের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। তার খোলা চিঠি পাওয়ার পর স্থানীয় জনগণ ও ভোটারদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। গেল কয়েক দিন থেকে পুলিশি মামলা ও ঢালাও ভাবে গ্রেফতার আতংকে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় থাকা ধানের শীষের সমর্থক কর্মীসহ স্থানীয় জনগণ তার খোলাচিঠির সাথে সহমত পোষন করে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছেন। এবিষয়ে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের ধানের শীষের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্ঠা সাবেক এমপি ও ২০ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাস খান ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এডভোকেট আবেদ রাজা জানান কুলাউড়ায় ধানের শীষের গণজোয়ার দেখে তা প্রতিহত করতে নৌকার সর্মথনে সরকার দলের নেতাকর্মীরা একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে ধানের শীষের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নাজেহাল করছেন। তারা এই নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন ইউনিয়নে নিজেরা নিজেদের অফিস জ্বালিয়ে কিংবা ভাঙ্গচুর করে আমাদের নেতাকর্মী ও সর্মথকদের উপর মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিচ্ছেন। এখন এমন মামলা হামলার ভয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় আমাদের নেতাকর্মী সর্মথকসহ স্থানীয় জনগণও। আমরা এই নির্বাচনী এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রশাসনের নিরপেক্ষ হস্তক্ষেপ ও ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।