নির্বিঘœ-শান্তির নির্বাচন আয়োজনে প্রজ্জ্বলিত হোক মাঙ্গলিক দ্বীপশিখা

33

ইনাম আহমদ চৌধুরী :
আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এবং সাংঘর্ষিক অবস্থার উদ্ভব হবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। বস্তুত:পক্ষে ইতোমধ্যে এর আলামতও দৃশ্যমন। তদুপরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ তাদের কার্যক্রম দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন এবং গুম, গ্রেফতার, মামলা, হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিচারে। সব চেয়ে শঙ্কার বিষয় নির্বাচনের এই বছরে তথাকথিত বন্ধুক যুদ্ধে বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা- অভিশ্বাস্যরূপে বেড়েছে। আইন ও শালিস কেন্দ্রের হিসেবে এ বছর নভেম্বর পর্যন্ত বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেছে ৪০৬ টি, এর মধ্যে অন্তরীণাবদ্ধই রয়েছেন ৮৫ জন। গত বছরের তুলনায় যা চারগুণ বেশী। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির জেলবন্দী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও এবারের নির্বাচন অংশ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত। নির্বাচনে প্রার্থীরাও জেল-জুলুম থেকে রেহাই পাচ্চেন না। দলে দলে সংঘর্ষ হচ্ছে-আত্মঘাতি অন্তর্দ্বন্দ্বেরও প্রকট প্রকাশ ঘটছে। রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে দায়িত্বশীল ব্যাকিবর্গও চরম বিদ্বেষমূলক ডাহা আজগুবি মিথ্যাচার করতেও দ্বিধা করছেন না। এসব কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। সভ্য সমাজের রাজনীতি থেকে যা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এই অনাকাঙ্খিত নির্বাচনী পরিবেশ থেকে আমাদের নিষ্কৃতি পেতে হবে। আজ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সম্প্রীতি ও সমমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতা , আইনের শাসন, সৌহার্দ্যমূলক সহঅবস্থানের দীক্ষা প্রতি মুহূর্তে পরাভূত হচ্ছে প্রলোভন ও পরাক্রম , ক্ষুদ্র স্বার্থবুদ্ধি, ক্ষমতা-লোভ বিদ্বেষ ও সহিংসতার প্রতিকারহীণ অপরাধে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের গণতন্ত্রী জনগণের তা মোঠেই কাম্য নয়। মুক্তিযুদ্ধের মহান চেতনায় এদেশের মানুষ উদ্বুদ্ধ। আইনের শাসন, মানবাধিকার, বাক স্বাধিনতা, গণতান্ত্রিক অঙ্গীকার, অসাম্প্রদায়িকতা, অর্থনৈতিক বৈষম্যহীনতায় প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো চরম রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। অর্জিত হয়েছিলো সাফল্য, প্রজ্জ্বলিত হয়েছিলো শান্তি, স্বাধীনতা ও প্রগতির মাঙ্গলিক দ্বীপশিখা। অনির্বাণ সেই সংগ্রামী মহান লক্ষ্য থেকে মানুষ বিচ্যুত হবে না। এই সাধারণ নির্বাচন তা অর্জনেরই সুযোগ এনে দিয়েছে। আমাদের দৃঢ় আশা এবং জোরালো দাবী- নির্বাচন সব দলের সব প্রার্থীর জন্য সমান এবং সকলের নির্বিঘœ অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হোক। এই প্রত্যয় নিয়ে এবং সদিচ্ছা তাড়িত হয়েই সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। অগ্রজ প্রতিম মুহিতের মনোভাবও ছিলো অনুরূপ এবং অস্বস্তি প্রদান মূলক। আমার বিশ্বাস এ ধরনের প্রত্যয় ও তার প্রকাশ, সৌহার্দ্যমূলক আচরণ এবং সৌজন্যবোধ দেশে-বিশেষ করে বর্তমান সংকটাকুল নির্বাচন কালে একটি অনুকূলও উৎসাহ ব্যাঞ্জক ঈপ্সিত পরিবেশ তৈরীতে সহায়ক হবে। দুর্ভাগ্যবশত ঐ ঘটনাও কোন কোন মহলে বিভ্রান্তমূলক বিরূপ প্রকিক্রিয়ার উদ্ভব করেছিলো। তবে দেখে আনন্দ ও সন্তুষ্টি লাভ করেছি যে-দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণ, বিশেষ করে সুশীল ও তরুণ সমাজ ঐ ধরনের সৌজন্যমূলক আচরণ ও মনোভাবের সপ্রসংস স্বীকৃতি জানিয়েছেন। বস্তুত:পক্ষে নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণের ইচ্ছা এই মনোবাসনা থেকেই সজ্ঞাত হয়েছিলো। যদিও আমি এই নির্বাচনে বর্তমানে অপারগ, আমার আশা ও বিশ্বাস সকলের নির্বিঘœ অংশ গ্রহনে এবং পারস্পারিক সাংঘর্ষিক অবস্থার অবর্তমানে প্রশাসনের আনুকূল্যে এই নির্বাচনে জনগণ তাদের মতামত সুচারু এবং বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন। এটাই হবে আমার প্রচেষ্টার স্বার্থকতা।