ভোট করতে পারছেন না খালেদা জিয়া

157

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড থাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ভোটের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশনও। রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল নাকচ হয়েছে ৪-১ ভোটে।
শনিবার বিএনপি প্রধানের পক্ষে শুনানি হয়েছে দুই দফায়। দুপুরের দিকে একবার এবং বিকাল পাঁচটার পর আরেকবার। এরপর নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার প্রথমে আপিল মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে ভোটের জন্য যোগ্য ঘোষণা করেন।
এই সময় বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীরা উল্লাস প্রকাশ করেন। আবার আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা ‘না, না, না’ বলে প্রতিবাদ জানান।
এ সময় নির্বাচন কমিশনার কমিতা খানম বলেন, ‘না, না, না এ রায় একজনের।’
এরপরও চারিদেকে পক্ষে বিপক্ষে হট্টগোল চলতে থাকেন।
এ সময় আপিল শুনানির আদালত পরিচালনা করা নির্বাচন কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ মাইক্রোফোনে বলেন, ‘এ রায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এটা তিনি একা মত দিয়েছেন। এ রায় একজনের রায়। এটা ফুল কোর্টের রায় নয়।’
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার রায় হলো এই আপিল মঞ্জুর করা যায় না। আদালতের রায়ে তিনি আসামি। আমরা কনস্টিটিউসনের ৫৬ ধারা অনুযায়ী যে কোন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আমরা বিবেচনা করতে পারি না। আমার রায় হলো এই আপিল মঞ্জুর করা যায় না। না মঞ্জুর করা হলো।’
এ কথা শুনে আওয়ামী লীগের আইজীবীরা উল্লাস প্রকাশ করেন। বিএনপির আইজীবীরা এর বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন।
এর ভেতরেই নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার যে আপিল এখানে উত্থাপন করা হয়েছে, সংবিধানের ৬৬ ধারায়, এই আপিল না মঞ্জুর করা হলো।’
এর পর নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘আমি বেগম কবিতা খানম বলছি, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে (খালেদা জিয়া) দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত দণ্ড বহাল আছে।’
‘আর যে রিটার্নিং অফিসারের অর্ডারের (আদেশের) উপর যে বক্তব্য রাখা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের অর্ডারের স্পিচ আমরা দেখছি। সেখান সব মামলার বক্তব্য রয়েছে এবং তাকে দণ্ডপ্রাপ্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং সে ক্ষেত্রে আরপিওর যে রেফারেন্স রয়েছে। আমরা বলতে চাই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে আমরা তার আপিল না মঞ্জুর করছি।’
এর পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘আমি আমার তিন জন কমিশনার শাহাদাত হোসেন, বেগম কবিতা খানম আর রফিকুল ইসলাম সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার যে দণ্ড বহাল আছে, সে কারণে তার আপিল আমি নামঞ্জুর করলাম।’
এরপর নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘যেহেতু পাঁচজন মাননীয় নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সহ চারজন মাননীয় নির্বাচন কমিশনার আপিল আবেদন নামঞ্জুর করেছেন এবং একজন মাননীয় নির্বাচন কমিশনার মঞ্জুর করেছেন, তাই চার-এক ভোটে এই আপিল নাচক হলো।
‘মাহবুব তালুকদারের রায়ই মানি’
বাইরে এসে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। উনার নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার রায় দিয়েছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) অংশ নিতে পারবেন।’
পুরো কমিশনের রায় না শুনে একজনের আদেশ নিয়ে মন্তব্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা জাজমেন্ট শুনে চলে আসার পর আমাদের অনুপস্থিতিতে কী হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। সেটা হওয়ারও আইনগত কোনো সুযোগ নেই। আপিল আবেদন যে নামঞ্জুর হয়েছে তা আমাদের জানার বাইরে।’
‘মাহবুব তালুকদার যখন আদেশ দিচ্ছিলেন তখন পুরো কমিশন নিশ্চুপ ছিলেন। এতেই প্রমাণ করে যে, তারা রায়ের সঙ্গে একমত ছিলেন।’
আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, ‘মাহবুব তালুকদার রায় দিয়েছেন, আর কোনো বাধা নেই ম্যাডামের ভোটে অংশ নিতে। মাহবুব তালুকদারের রায়টিই ফেয়ার ও লিগ্যাল জাজমেন্ট। একবার রায় হওয়ার পর দ্বিতীয়বার রায় ঘোষণার কোনো সুযোগ আছে কী?’
তবে ইসির আদেশের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে যাওয়ার আভাসও দেন এই আইনজীবী। খোকন বলেন, ‘আদেশের আইনগত একজামিন করে উচ্চ আদালতে যাব কি না বলব। যদি ন্যায়বিচার হয় তাহলে উচ্চ আদালত তার এটা বৈধ করবে ইনশাহআল্লাহ।
শুনানি কক্ষ থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার একজন ছাড়া সবাই নামঞ্জুর করেছে। এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই, চিৎকার করার কিছুই নেই।’